ঢাকা: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের কোনো বিকল্প নেই। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে তামাক কোম্পানির মতামত নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র-ডর্প আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিবাদ হলে তামাকের অবাধ বন্ধ হয়ে যাবে। তামাক বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দোষ শুধু সরকারের না, দোষ সবার। যার দোকানে পাওয়া যাচ্ছে এবং যে ক্লাবে খাওয়া হয় সেগুলো বন্ধ করে দিন। এটা নাগরিকদের দায়িত্ব।’
নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আমরা নিজেরা নিজেদের সচেতন করতে পারলে তামাকের আবাদ কমে যাবে। এক সময়ে স্যানিটারি লেক্টিনের ক্ষেত্রে আমরা সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি, যেটার সুফল আমরা পেয়েছি। তরুণদের বলব তোমরা সচেতন হও এবং দায়িত্ববান হও।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারউজ জামান বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকজনিত রোগে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ (প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন) মারা যায় এবং লাখ লাখ মানুষ অসুস্থ হয়। অথচ, তামাক কোম্পানিগুলো মুনাফার আশায় মিথ্যা প্রচার করে বলছে যে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ হলে সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাবে। বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও ২০১৩ সালে সংশোধনের পর গত ১৮ বছরে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে সাড়ে ১২ গুণ। একইসঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ১৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এতে সুস্পষ্ট যে, তামাকের ব্যবহার কমলেও সরকারের রাজস্বে প্রভাব পড়ে না।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খন্দকার বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার পেতে হবে জনস্বাস্থ্যের। তামাক শিল্পের স্বার্থের নয় এবং তামাক শিল্পের মতামত নেওয়ার জন্য কোনো পরামর্শ সভা আয়োজন করা যাবে না।’
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ডর্প’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এএইচএম নোমান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডর্প’র উপনির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান। উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ার সংশোধনীগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।
সেগুলো হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশু-কিশোর ও তরুণদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, তামাকপণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
সেমিনারে তামাক বিরোধী যুব প্রতিনিধি তাবাসসুম খানম রাত্রি এবং সবুর আহমেদ কাজল বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বসে তাদের মতামত গ্রহণ না করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ করতে হবে।’