ঢাকা: আগামীতে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত কর্মচারীরা ঢালাওভাবে উৎসাহ বোনাস পাবেন না। বোনাস দেওয়ার ভিত্তি হবে নিট মুনাফা। আর মুনাফা অর্জনের পর প্রথম লভ্যাংশ দিতে হবে সরকারকে। লভ্যাংশ না দিলে উৎসাহ বোনাস পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও সরকারের কাছে তা দাবি করতে পারবে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
জানা যায়, কর্মচারীদের উৎসাহ বোনাস প্রদানের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা থাকলেও বড় কয়েকটি ব্যাংক তা যথাযথভাবে মানছে না। এমন কী নিয়ম ভঙ্গ করে বছরে তিনটির অধিক উৎসাহ বোনাস দেওয়া হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি অভিন্ন ‘উৎসাহ বোনাস নির্দেশিকা’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ইতোমধ্যে এর একটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে এটি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার পর এ নির্দেশিকা ২০২৪ সালের উৎসাহ বোনাস দেওয়ার ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে। নির্দেশিকার বাইরে বোনাস দিতে হলে এ বিভাগের অনুমোদন লাগবে।
খসড়া অনুযায়ী, ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণ ও অগ্রিমের ওপর প্রভিশন, বিনিয়োগের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভিশন এবং অন্যান্য সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভিশন সমন্বয় করে অর্থাৎ বাদ দিয়ে নিট মুনাফার হিসাব করতে হবে।
খসড়া অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক (সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) ব্যাংক উৎসাহ বোনাস দেবে পাঁচটি উপাদান বা কর্মসম্পাদন পরিমাপকের ভিত্তিতে। এগুলো হচ্ছে- চলতি মূলধনের ওপর নিট মুনাফার হার, আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধির হার, ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ বৃদ্ধির হার, খেলাপি ঋণ আদায়ের হার এবং অবলোপন করা ঋণ আদায়ের হার।
সূত্র মতে, বোনাস দেওয়া হবে নম্বরের ভিত্তিতে। নম্বর প্রাপ্তিতে যারা বেশি ভালো করবে, তারা ৩টি বোনাস পাবে। নম্বর কম হলে বোনাসের সংখ্যাও কম হবে। তবে যদি খুব কম হয়, তাহলে বোনাস দেওয়া যাবে না। একটি বোনাস বলতে এক মাসের মূল বেতনের সমান অর্থ।
একটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের এমডি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নির্দেশিকার পক্ষে তিনি। তবে একটা সুবিধা আগে কেউ পেলে তা বাদ দেওয়া খুব কঠিন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বিশেষায়িত (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক) ব্যাংক এবং দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান (ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবি ও বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন- বিএইচবিএফসি)-এর বোনাস দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। এদের ক্ষেত্রে আমানতের পরিমাণ বাড়ানোর শর্তটি রাখা হচ্ছে না। তাদের মোট উপাদান থাকছে চারটি করে।
বিশেষায়িত ছয় ব্যাংকের চলতি মূলধনের ওপর নিট মুনাফার হারের নম্বর, ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ বৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণ আদায়ের হারের নম্বর এবং অবলোপন থেকে আদায় হারের নম্বরের ভিত্তিতে বোনাসের সংখ্যা নির্ধারিত হবে।
ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর জন্য নতুন উপাদান হলো পুঁজিবাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ানোর হার। এর জন্য আলাদা নম্বর থাকবে। এ ছাড়া নিট মুনাফা, বিনিয়োগের বিপরীতে লভ্যাংশ ও খেলাপি থেকে আদায়ের বিপরীতে আলাদা করে নম্বর থাকবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)-এর ক্ষেত্রে আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং অবলোপন করা ঋণ আদায়- এ দুটি সূচকের পরিবর্তে যোগ করা হয়েছে- ঋণের পরিশোধযোগ্য সুদ ও আসলের বিপরীতে প্রকৃত পরিশোধের হার। এর জন্য আলাদা নম্বর রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া নিট মুনাফা, খেলাপি থেকে আদায় এবং ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণের জন্য নম্বর থাকছে।