নেপালে চলমান বিক্ষোভ ও সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থান নিয়েছে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়—যদি সহিংস কর্মকাণ্ড, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ অব্যাহত থাকে, তবে রাত ১০টা (স্থানীয় সময়) থেকে সেনাসহ সব নিরাপত্তা সংস্থা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে বাধ্য হবে।
নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাজারাম বসনেত স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু গোষ্ঠী বর্তমান সংকটকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ নাগরিক ও সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির মারাত্মক ক্ষতি করছে, লুটপাটে লিপ্ত হচ্ছে এবং অগ্নিসংযোগ ঘটাচ্ছে। যদি এই কর্মকাণ্ড বন্ধ না হয়, তবে নেপাল সেনা ও অন্যান্য সব নিরাপত্তা সংস্থা রাত ১০টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সেনাবাহিনী জনগণের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্র রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ জন্য নাগরিকদের সেনাবাহিনীর এই প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি পর্যালোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী আপডেট জানানো হবে।
এ ছাড়া লুট হওয়া অস্ত্র-শস্ত্র ফেরত দেওয়ার জন্যও সেনাবাহিনী আলটিমেটাম দিয়েছে। মুখপাত্র বসনেত বলেন, ‘যারা অস্ত্র লুট করেছে, আমরা তাদের রাত ১০টার মধ্যে তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি।’
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নেপালের সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।
ভিডিও বার্তায় বিক্ষোভের নেতৃত্বকে সংলাপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানান তিনি।
সেনা প্রধান বলেন, ‘বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং জাতির সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষা করা সবার যৌথ দায়িত্ব। তাই আমি অনুরোধ করছি, বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করুন ও সংলাপের পথে এগিয়ে যান।’
তিনি দেশব্যাপী বিক্ষোভে জনসম্পদের ক্ষতির জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন ও নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানান। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
জেনারেল সিগদেল জোর দিয়ে বলেন, ‘শান্তি, নিরাপত্তা ও জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা প্রত্যেক নেপালি নাগরিকের দায়িত্ব। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, নেপাল সেনাবাহিনী সব সময় দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, জাতীয় ঐক্য ও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।’
তিনি সতর্ক করেন, বিক্ষোভ কোনোভাবেই জাতীয় ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্য, সরকারি ও বেসরকারি সম্পদ, সাধারণ নাগরিক কিংবা বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারবে না।
বার্তার শেষে সেনাপ্রধান সকল নাগরিককে দেশপ্রেম, সামাজিক সম্প্রীতি ও ঐক্য বজায় রেখে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সেনাবাহিনীর এই সতর্কবার্তা এমন সময় এসেছে, যখন সিংহদরবার, সুপ্রিম কোর্ট ও সংসদ ভবনসহ একাধিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দাউ দাউ করে জ্বলছে। দিনের বেলায় বিক্ষোভকারীরা এসব ভবন দখল করে আগুন লাগায়। রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও সরকারি অবকাঠামোর ওপর ধারাবাহিক হামলায় দেশ কার্যত জরুরি পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।