ঢাকা: ১৯৯০ সালের পর ২৮ বছর পার করে ২০১৯ সালে সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে ছয় বছর পার ২০২৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হলো ডাকসু নির্বাচন। তবে দিনব্যাপী তুমুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ডাকসুতে ভূমিধস জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’।
নির্বাচনে ভিপি পদে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) বড় ব্যবধানে জয় ঘরে তুলেছেন। এছাড়া, জিএস পদে একই প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ এবং এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান জয়ী হয়েছেন। এছাড়া, হল সংসদেও শিবির সমর্থিত প্রার্থীদের বেশিরভাগই জয় পেয়েছেন। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে সিনেট ভবনে ঘোষিত ডাকসুর আনুষ্ঠানিক সর্বশেষ ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা যায়।
ফলাফলে দেখা গেছে, ভিপি প্রার্থী মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ পান ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারী হামিম পান ৫ হাজার ২৮৩ ভোট। এছাড়া এজিএস পদে মহিউদ্দিন খানের প্রাপ্ত ভোট ১১ হাজার ৭৭২। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ ভোট।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে শিবির সমর্থিত জোটের ফাতেমা তাসনিম জুমা ১০ হাজার ৬৩১ ভোট, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে একই প্যানেলের ইকবাল হায়দার ৭ হাজার ৮৩৩ ভোট, কমন রুম-রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে একই প্যানেলের উম্মে সালমা ৯ হাজার ৯২০ ভোট, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে এই প্যানেলেরই জসীমউদ্দিন খান ৯ হাজার ৭০৬ ভোট (যিনি জুলাইয়ে চোখ হারান), এই প্যানেল থেকে ক্রীড়া সম্পাদক পদে আরমান হোসেন ৭ হাজার ২৫৫ ভোট, ছাত্র পরিবহণ সম্পাদক পদে একই প্যানেলের আসিফ আব্দুল্লাহ ৯ হাজার ৬১ ভোট, এই প্যানেল থেকেই ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলাম ৯ হাজার ৩৪৪ ভোট, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে একই প্যানেলের আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ ৭ হাজার ৩৮, মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে সাখাওয়াত জাকারিয়া ১১ হাজার ৭৪৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
এদিকে, তিনটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ ৭ হাজার ৭৮২, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে জুলাই আন্দোলনের আলোচিত মুখ সানজিদা আহমেদ তন্বি ১১ হাজার ৭৭৮ এবং সমাজসেবা সম্পাদক পদে যুবাইর বিন নেছারী ৭ হাজার ৬০৮ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন।
এর আগে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ পর্যন্ত চলে ডাকসু কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এবারের নির্বাচনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন আলাদা আলাদা প্যানেলে অংশ নেয়। এর বাইরেও অংশ নেয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে ডাকসুর ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৩ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৮৭৩ জন এবং ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন। নির্বাচনে ৭৮ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।