ঢাকা: ডাকসু ভোট জাতীয় নির্বাচনের প্রতিফলন নয় বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ: সংস্কার বাস্তবায়নের পথরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মান্না বলেন, ‘আমি দুইবার ডাকসুর ভিপি হয়েছি। খুব পপুলার ছিলাম ছাত্রদের মধ্যে। কিন্তু আমার কোনো রাজনৈতিক দল হয়নি, আমি ক্ষমতায় যাইনি। ডাকসুতে জেতা মানেই জাতীয় রাজনীতিতে বিরাট কিছু করে ফেলা নয়।’
তিনি বলেন, ‘যারা এবার ডাকসুতে নির্বাচিত হয়েছে, তাদের সুসংগঠিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আছে। আমি যখন ভিপি ছিলাম, সংগঠন ছিল না। এবার যারা জিতেছে তাদের আছে। তারা সেটা ট্রান্সলেট করতে পারবে।’
তবে তিনি সতর্ক করেন যে এই জয়ের মাধ্যমে যেন নতুন কোনো অস্থিরতা তৈরি না হয়। ‘গতকাল যে নির্বাচন হয়েছে, যদি তা ঘিরে নতুন গোলমাল শুরু না হয়, তাহলে মানুষ ভাববে— ভালো নির্বাচন সম্ভব।’
জামায়াত-শিবির প্রসঙ্গে মান্না বলেন, ‘আমি তো দেখছি, গুপ্ত রাজনীতি করে তারা সংগঠিত থেকেছে। ওরা আওয়ামী লীগের মধ্যে ঢুকেছে, ছাত্রলীগের মধ্যে ঢুকেছে, মামলা খেয়েছে, গালাগালি শুনেছে, কিন্তু বেঁচে থেকে লড়াই করেছে।’
তিনি বলেন, এভাবে থেকেও তারা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয় পেয়েছে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘রাজনীতি তালি বাজিয়ে, বগল বাজিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া নয়। এটা একটা কঠিন সংগ্রাম, আন্তরিকতার লড়াই। যারা হালকাভাবে রাজনীতি নিয়েছিল, তারা নির্বাচনের দিন বিকেলেই প্রতিবাদ শুরু করেছিল।’
ছাত্রদের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়ে মান্না বলেন, ‘এ প্রজন্ম সাহস দেখিয়েছে। চব্বিশের মতো নির্বাচনে তারা বলেছে— এই দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি আমরা দেখতে চাই না। নতুন কিছু করতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘গেস্টরুম কালচার, বড় ভাইদের সালাম, প্রোটোকল, ভর্তি-বাণিজ্য— এসব অপমানিত করেছে ছাত্রসমাজকে। তারা এবার সাহস দেখিয়েছে।’
আধুনিক প্রজন্ম তথা ‘জেনজি’ নিয়ে মান্না বলেন, ‘নেপাল, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকায় জেনজি ইতিহাস তৈরি করছে। তারা বলছে, ‘এই অপমানজনক জীবন আর নয়, এবার সাহস দেখাব। বাংলাদেশেও সেই প্রভাব পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ঐক্যমত কমিশন গঠন করেছি ভালো নির্বাচনের সংস্কার নিশ্চিত করতে। সরকার সেই দায়িত্ব পালন করছে না। তাই সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমেই আমরা একটি সাংবিধানিক ভিত্তি চাই।’
মান্না প্রস্তাব করেন, প্রেসিডেন্ট চাইলে এই সংকটের ব্যাখ্যা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিতে পারেন।
‘যদি সুপ্রিম কোর্ট কোনো রায় দেয়, তাহলে জামায়াত-শিবিরসহ সবাইকে তা মানতে হবে।’
আধুনিক জীবনচর্চা নিয়ে মান্না বলেন, ‘আমার জীবন আমি আমার মতো যাপন করব। কে কোথায় যাবে, কপালে টিপ দেবে কি না, এটা কেউ নির্ধারণ করতে পারে না। আমি চাই উন্নত সমাজ, যেখানে স্বাধীনতা থাকবে, কিন্তু তা কারও ক্ষতির কারণ হবে না।’
আলোচনার এক পর্যায়ে মান্না বলেন, ‘শুধু কারো করুণায় এমপি বা মন্ত্রী হওয়া যাবে না। চিন্তার ভিত্তিতে, লড়াইয়ের মাধ্যমে যেতে হবে। যাদের সঙ্গে ঐক্য হবে, সেটা সুবিধাবাদী ঐক্য হবে না। আমরা সত্যিকার পরিবর্তনের পথেই ঐক্য গড়ছি।’
আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)-এর সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।