ঢাকা: তামাকের ব্যবহার কমানো কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়। বরং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকের ব্যবহার কমানো অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাংবিধানিক দায়িত্ব বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা। ফলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালীকরণে বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় ভূমিকা রাখা জরুরি।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ‘তামাকজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল এডভোকেটস’ (বিটিসিএ) অনলাইন জুম প্লাটফর্মে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলন মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের পরিচালক ইকবাল মাসুদ এবং সঞ্চালনা করেন টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) এর প্রকল্প সমন্বয়কারী ফারহানা জামান লিজা।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ-এর সভাপতিত্বে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, ‘মানস’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরী , জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী ও ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ। তরুণ প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস সোসাইটি (বিএমএসএস) এর সভাপতি ইফতেখার আহমেদ সাকিব।
মূল বক্তব্যে ইকবাল মাসুদ বলেন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ অত্যন্ত ইতিবাচক হলেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতপার্থক্য রয়েছে। বিষয়টি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আইন প্রণয়নের ফলে তামাকের ব্যবহার কমার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের তামাক খাত থেকে রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১১ গুণ। ফলে আইন সংশোধন করলে রাজস্ব কমবে বলে তামাক কোম্পানি যে দাবি করছে তা বিভ্রান্তিকর। বরং তামাক রপ্তানিতে শুল্ক শূন্য করার কারণে চাষ বেড়ে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ছে। আমরা দেশের সংবিধান এবং আদালতের নির্দেশনা অনুসারে কাজ করার জন্য অর্থ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে আহবান জানাই।
ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, তামাক একটি ক্ষতিকারক ভেষজ যা বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত। তামাকের পরোক্ষ ক্ষতিতেও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে জনস্বাস্থ্য। কাজেই সরকারেী, বেসরকারী, প্রশাসনিক , আইনগত সকল পর্য়ায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব। তামাক নিয়ন্ত্রণে অন্যতম প্রধান উপকরণ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন। কিন্তু তামাক কোম্পানি নানা অপকৌশলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
সভাপতির বক্তব্যে সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র এখনও তামাক কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী ৫০ শতাংশ প্যাকেটের উপরে হবে। অথচ আইন লঙঘন করা হয়েছে। এফসিটিসিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ সরকারের দ্বৈত আচরণের সুযোগে তামাক কোম্পানি জনস্বাস্থ্য সহায়ক নীতি সুরক্ষায় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।
অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে আন্তরিক হলেও অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা এক্ষেত্রে প্রশ্নবীদ্ধ। এ প্রেক্ষাপটে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের প্রতি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে সক্রিয় সমর্থন প্রদানের আহ্বান জানাই।
ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, তামাক শাখের করাতের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তামাক জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতির পাশাপাশি পরিবেশ ও শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্বক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
পাবলিক হেলথ লইয়ার্স ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮ ক অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির সকল পণ্য নিষিদ্ধের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে প্রদান করা হয়েছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫, এর ধারা ১২ অনুসারে তামাক ও তামাক জাতীয় ফসল চাষে নিরুৎসাহিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণের অধিকার রাখে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কমিটি করা হলেও তাদেরকে পাশ কাটিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে আইন সংশোধনের দায়িত্ব কেনো দেয়া হয়েছে সে বিষয়টি ভাবতে হবে। এর পেছনে কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং তামাক কোম্পানির ইন্ধন আছে কিনা তা খুঁজে দেখতে হবে।
ইফতেখার আহমেদ সাকিব বলেন, তামাক কোম্পানি থেকে সরকার যে রাজস্ব পায় তার চেয়ে তামাকজনিত চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি। তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারকে জাতীয় যুব কাউন্সিল গঠনের আহ্বান জানাই।