ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও বাহাদুর শাহ পার্ক সংলগ্ন এলাকা থেকে অবৈধ দোকানপাট, লেগুনা ও বাসস্ট্যান্ড অপসারণের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কর্মসূচিতে ৩ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় সমাবেশ আয়োজন করেন জবি শিক্ষক সমিতি। সমাবেশটি বাহাদুর শাহ পার্ক চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মসূচিতে জবি শিক্ষক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আজম খান সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বাংলা বাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কলেজিয়েট স্কুল, ঢাকা আইনজীবী সমিতি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
প্রতিনিধিরা জানান, এই এলাকা বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসম্বলিত একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা এবং এখানে শিক্ষার পরিবেশ বজায় না থাকলে শিক্ষার্থীরা বিকশিত হতে পারবে না। তারা ফুটপাত থেকে অবৈধ টং দোকান উচ্ছেদের দাবি জোরালোভাবে উত্থাপন করেন, কারণ এসব দোকানকে ঘিরে মাদক সেবন, ব্যবসা এবং চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ ঘটে থাকে, যা সবার নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরুপ।
সমাবেশ জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন তিনটি দাবি ও ঘোষণা উত্থাপন করেন।
- আজ থেকে রায়সাহেববাজার থেকে কোনো বাস বা লেগুনা এই এলাকায় প্রবেশ করবে না। পরীক্ষামূলকভাবে চালু থাকা লেগুনা ও বাসস্ট্যান্ড অপসারণ এখন থেকেই স্থায়ীভাবে কার্যকর হবে।
- আগামী দুই ঘণ্টার মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাহাদুর শাহ পার্ক সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু করে কবি নজরুল সরকারি কলেজ হয়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজ পর্যন্ত সব অবৈধ দোকানপাট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের তত্ত্বাবধানে এবং পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় অপসারণ করা হবে।
- আজ থেকে বাহাদুর শাহ সড়কের এই চত্বরকে ‘বিশ্বজিৎ চত্বর’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ বিশ্বজিৎ ফ্যাসিবাদবিরোধী এক ঐতিহাসিক মাইলফলকের নাম এবং এই চত্বরকে ঘিরেই পুরান ঢাকা ও জবির সকল ধরণের আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।
অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন আরও বলেন, ‘পরিবহন ও দোকানপাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের শত্রু নন, বরং একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরিতে তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে।’ তিনি সকলে মিলে একটি সুন্দর ও নৈতিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এই পরিবহনগুলো এলাকায় নিরাপত্তার জন্য চরম সংকট তৈরি করছে। গত এক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে নানা অপ্রতিকর ঘটনা ঘটছে, যা আর চলতে দেওয়া যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফুটপাতে দোকানপাট বসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পার্কসহ পুরো এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে, তাই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’ রায়সাহেববাজার থেকে কোনো গাড়ি চূড়ান্তভাবে প্রবেশ না করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে না বলেও তিনি সতর্ক করেন।
কর্মসূচি শেষে অংশগ্রহণকারীদের সই করা দাবিসম্বলিত একটি স্মারকলিপি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পুলিশ কমিশনার বরাবর প্রদান করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, দফতরের পরিচালক, বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি, এবং জবি সংলগ্ন বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকার আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিপুল সংখ্যক অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।