ঢাকা: বাংলাদেশের এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণ পেছানোর কোনো যুক্তি নেই- বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে ‘ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম’ (ইআরএফ) আয়োজিত ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সেমিনারে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি।
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এলডিসি তালিকায় থাকা তিন দেশ- বাংলাদেশ, নেপাল ও লাওস নিয়ে আলোচনা হবে। আর এলডিসি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে নেপাল ও লাওস থেকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশের উত্তরণ পেছানোর যুক্তি নেই।
এলডিসি থেকে উত্তরণে সময় বাড়ানোর বিষয়ে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রসঙ্গে
তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের বিষয়টি এখন আর সরকারের হাতে নেই। এটা জাতিসংঘের নির্ধারিত প্রক্রিয়া, যেখানে সব সদস্যরাষ্ট্রের মতামত গুরুত্ব পাবে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসিতে (সিডিপি) গিয়ে বলতে হবে, এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য আরও সময় লাগবে। কিন্তু কীভাবে বলবেন? সদস্যদের তো বোঝাতে হবে যে, ভাই পারব না। আমার প্রশ্ন, নেপাল, লাওস পারলে আমরা কেন পারব না? তিন বছর পেছানোর কথা বলা হচ্ছে, এটা তো পেছানো হলোই। হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালে। কোভিডের কারণে সব দেশের জন্যই দুই বছর পিছিয়ে ২০২৬ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও বলেন, গ্রাজুয়েশন ঠেকাতে হলে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন জোগাড় করতে হবে। শুধু কয়েকটি দেশের সমর্থনে এটি পেছানো যাবে না। ব্যবসায়ীরা চাইলে এ বিষয়ে নিজেদের ক্রেতা ও আমদানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে লবিং করতে পারে।
সেমিনারে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ’-এর চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, এলডিসি উত্তরণ পেছানোর সুযোগ নেই। তবে বেসরকারি খাতেরও এখানে দায়িত্ব আছে। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তাদের বলতে হবে, না পেছালে ক্ষতি কী। সময় নির্ধারণের বিষয় নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে খোলামেলা আলোচনা হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এলডিসি উত্তরণ নিয়ে সরকার আগের অবস্থানেই আছে। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। ব্যবসায়ীদের ঝুঁকি নেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ঝুঁকি নিয়ে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ইত্যাদি দেশ এগিয়ে গেছে। ঝুঁকি না নিলে এগোনো যাবে না। তবে এলডিসি উত্তরণ সামনে রেখে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়বে।
কারখানা ও শ্রমিকদের মজুরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কম্বোডিয়ার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০৮ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে মাঝখানে যখন মজুরি বাড়ল, তখনো তা ছিল ১০০ ডলারের সমান, ২০২৪-২৫ সময়ে এসেও তা ১০০ ডলার।
‘এলডিসি উত্তরণ নিয়ে বিগত সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেনি’- দাবি করেবাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অতীতে ভুয়া তথ্য দিয়ে গ্র্যাজুয়েশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যা ব্যবসায়ীদের ঝুঁকিতে ফেলেছে। এটা তো অন্তর্বর্তী সরকারও দেখেছে, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আগে হিসাব করা হয়েছে।ফলে একটা সরকার আগে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নতুন সরকার তা নতুনভাবে সাজাতে পারত। রফতানি বাজার বড় হওয়ায় বাংলাদেশের ঝুঁকি বেশি।
ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালার সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।