ঢাকা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জয়ী হয়েছেন জাবি শাখা শিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।
এর আগে দীর্ঘ ৪৫ ঘণ্টা ভোট গণনা শেষে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ফলাফল ঘোষণা করেন জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন হলের রিটার্নিং কর্মকর্তারা। ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম রাশিদুল আলম।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’র জয়জয়কার হয়েছে। জাকসু্র সম্পাদকীয় ১৯ পদের মধ্যে ১৫টিতেই জয় পেয়েছেন প্যানেলটির প্রার্থীরা। এছাড়া, কার্যকরী সদস্যের ছয় পদে পেয়েছেন পাঁচটিতে জয়। সেইসঙ্গে হল সংসদেও তাদের সমর্থিত বেশিরভাগ প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।
হল সংসদ নির্বাচন
আল বেরুনী হলের ভিপি পদে ১০৬ ভোট পেয়ে রিফাত আহমেদ শাকিল জয়ী হয়েছেন। জিএস পদে মো. মুনতাসির বিল্লাহ জয়ী হন। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভিপি পদে জয় পান বুবলী আহমেদ ও জিএস পদে সুমাইয়া খানম। এ হলে এজিএস পদে কোনো প্রার্থী ছিলেন না। জাহানারা ইমাম হলের ভিপি পদে মোছা. মাহমুদা খাতুন ১৫৬ ভোট ও জিএস পদে রেজওয়ানা বুশরা ১৬৬ ভোট পেয়ে জয়ী হন। এজিএস পদে ১১৩ ভোট পেয়ে যৌথভাবে সাদিয়া খাতুন ও লামিয়া জান্নাত জয়ী হয়েছেন।
১০ নম্বর ছাত্র হলের ভিপি পদে মো. আসিফ মিয়া ১৭১ ভোট, জিএস পদে মো. মেহেদী হাসান ১৯৭ ভোট ও এজিএস পদে নাদিম মাহমুদ ২০২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ভিপি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোছা. শারমিন খাতুন, ১২০ ভোট পেয়ে মেহরাজ মোহনা এবং ১৫৮ ভোট পেয়ে শাহানা আক্তার জয়ী হন। বেগম সুফিয়া কামাল হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভিপি পদে জান্নাতুন নাইম শিরিন ও জিএস পদে রুবিনা জাহান তিথি জয় পান।
শহীদ সালাম-বরকত হলে ১১১ ভোট পেয়ে ভিপি পদে মারুফ হোসেন ও ১১৭ ভোট পেয়ে মাসুদ রানা সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হয়েছেন। মওলানা ভাসানী হলের ভিপি পদে আব্দুল হাই স্বপন ১৬৯ ভোট ও জিএস পদে হৃদয় পোদ্দার ১৯৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। মীর মোশাররফ হোসেন হলে ভিপি পদে খালেদ জুবায়ের শাবাব ১৫৩ ভোট ও জিএস পদে শাহরিয়ার নাজিম রিয়াদ ১৯৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলে ভিপি পদে ফারজানা আক্তার উর্মী ২১৫ ভোট ও জিএস পদে প্রিয়াংকা কর্মকার পিয়া ২৭৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলে ভিপি পদে জিএমএম রায়হান কবীর ১২৫ ভোট ও জিএস পদে আবরার শাহরিয়ার ১৩৯ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ভিপি পদে ৩৮৭ ভোট পেয়ে রাকিবুল ইসলাম ও জিএস পদে আলী আহমদ ১৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। রোকেয়া হলে ভিপি পদে তাসনিম খন্দকার ২৫৬ ও জিএস পদে নাবিলা মাহজাবিন ৩৫৩ ভোট পেয়ে জয় পান।
২১ নম্বর ছাত্র হলে ভিপি পদে ইবনে শিহাব ২০০ ভোট ও জিএস পদে ওলিউল্লাহ আল মাহাদী ২৫৩ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। শহীদ রফিক-জব্বার হলে ভিপি পদে মেহেদী হাসান ১৬২ ভোট ও জিএস পদে শরিফুল ইসলাম ২৭১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ফজিলতুন্নেসা হলে জিএস পদে ফারজানা তাবাসসুম রূপা ৩১৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ভিপি পদে মো. সিফাতউল্লাহ ২৪৪ ভোট ও জিএস পদে মাহমুদুল হাসান সাকিব ১৬১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ হলে ভিপি পদে অমিত কুমার বণিক ১৬১ ভোট ও জিএস পদে মো. মাহমুদুল হাসান ইমন ১৫৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
বেগম খালেদা জিয়া হলে ভিপি পদে ফারজানা রহমান ১৬০ ভোট ও জিএস পদে ফাতিমাতুজ্জহরা ১৬১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। প্রীতিলতা হলে ভিপি পদে সুমাইয়া আক্তার মিথি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও জিএস পদে ইফফা রহমান ১৭৪ ভোট পেয়ে জয়ী হন। ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ভিপি পদে নাহাদাতুন হাসানা ১৫৫ ভোট ও জিএস পদে সাদিয়া মেহজাবিন জয়ী হয়েছেন।
৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে। একই দিন রাত সোয়া ১০টার দিকে ভোট গণনা শুরু হয়। তবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গণনা হওয়ায় প্রক্রিয়াটি শেষ হতে প্রায় ৪৫ ঘণ্টা সময় লাগে। নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৩ জন। ভোট পড়েছে ৬৭ থেকে ৬৮ শতাংশ।
এবারের নির্বাচনে জাকসু ও হল সংসদের ৩৪০টি পদের বিপরীতে ৬২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে হল সংসদের ৩১৫টি পদের মধ্যে ১৩১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন এবং ৬৮টি পদ এখনও শূন্য রয়েছে। আর কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি পদের বিপরীতে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী, যার মধ্যে ১৩২ জন ছাত্র ও ৪৫ জন ছাত্রী।
উল্লেখ্য, এবারের জাকসু নির্বাচনে অংশ নেয় আটটি প্যানেল। নির্বাচনের দিন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলসহ পাঁচটি প্যানেল ভোট ও ফল বর্জন করে।