জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আমিনুর রহমান নূর একটি নতুন গাণিতিক সূত্র আবিষ্কার করেছেন, যা জটিল power-sum নির্ণয়ের পদ্ধতিকে সহজ করে তুলেছে। এই যুগান্তকারী সূত্রটি গত ১০ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের গবেষণা প্ল্যাটফর্ম Zenodo তে প্রকাশিত হয়েছে।
আমিনুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ গবেষণার ফল এই সূত্র। ২০০৯ সাল থেকে সূত্র বের করার চেষ্টা শুরু করি। কোথায় প্রকাশ করতে হবে তা জানতাম না। বারবার ব্যর্থ হয়েছি। অবশেষে ২০২৫ সালে সাহস করে নিজেই গবেষণাপত্র লিখে আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ করি’।
নতুন এই সূত্রের মূল কাজ হলো Power Sum অর্থাৎ 1^p + 2^p + 3^p + … + n^p নির্ণয়ের জন্য একটি সরাসরি সমাধান দেওয়া। পূর্বে এ ধরনের সমস্যার সমাধানে Bernoulli সংখ্যা ও Stirling সংখ্যা ব্যবহার করতে হতো, যা ছিল অত্যন্ত জটিল। আমিনুরের নতুন পদ্ধতিতে সেই জটিলতা নেই এখানে শুধু p = 1, 2, 3, 4, 5, … ইত্যাদি বসালেই সহজে ফলাফল পাওয়া যায়। এই সূত্রটি বিখ্যাত Faulhaber-এর সূত্রের মতোই সঠিক ফলাফল দেয়, তবে এটি শেখা ও ব্যবহার করা অনেক বেশি সহজ। সর্বশেষ গবেষণায় তিনি Interval Table Method–এর মাধ্যমে power-sum নির্ণয়ের সহজ সূত্র উপস্থাপন করেছেন, যেখানে আর জটিল Bernoulli বা Stirling সংখ্যার প্রয়োজন হবে না।
গবেষকরা মনে করছেন, আমিনুর রহমানের এই সূত্রটি কম্পিউটেশনাল ম্যাথমেটিক্সে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য power-sum বোঝা আরও সহজ হবে।
শৈশব থেকেই গবেষণার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল আমিনুর রহমানের। তিনি নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম একটি বড় সূত্র উদ্ভাবন করেন। কলেজ জীবনে তিনি আরেকটি থিওরি এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে Interval Table Method তৈরি করেন। তবে অর্থনৈতিক সংকট ও পারিবারিক সমস্যার কারণে তার গবেষণা প্রায় থেমে যায়। বাবার আলাদা হয়ে যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব নিতে হয় তাকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর টিউশনি করেই তাঁকে সংসার চালাতে হয়েছে, কখনো দিনে চার-পাঁচটি, কখনো ছয়টি টিউশনি নিতে হতো। করোনাকালে টিউশনি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি অনলাইনে পড়ানো শুরু করেন এবং “Our Math School” নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেন।
২০২১ সালে তিনি ৬০০ পৃষ্ঠার “Geometry for Competitive Exam” নামের একটি বই প্রকাশ করেন, তবে প্রচারের অভাবে বইটি তেমন সাড়া পায়নি। ২০২৪ সালে তিনি দেশের সবচেয়ে বড় GRE Math অনলাইন কোর্স তৈরি করেন, যেখানে রয়েছে ২৮১টি ভিডিও এবং ৫০টির বেশি টেস্ট; এজন্য তাকে প্রায় তিন লাখ টাকা ধার করতে হয়েছিল।
আমিনুর রহমান জানান, তার গবেষণা এখানেই শেষ নয়। সামনে আরও দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তার লক্ষ্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পিএইচডি করা এবং তিনি আশাবাদী, একদিন বাংলাদেশকেও আন্তর্জাতিক গবেষণায় প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন। তিনি বলেন, “এই সূত্র প্রকাশ আমার দীর্ঘ গবেষণার প্রথম ধাপ। আশা করি একদিন বাংলাদেশকেও আন্তর্জাতিক গবেষণায় প্রতিনিধিত্ব করতে পারব”।