Friday 07 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লন্ডনে মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টা, সরকারের নিন্দা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:১০ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:০৪

ঢাকা: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমের গাড়িতে লন্ডনে হামলার চেষ্টার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উই থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১২ সেপ্টেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসার সময় একদল বিক্ষোভকারী বাংলাদেশ হাইকমিশনের গাড়িতে ডিম নিক্ষেপ করে এবং কিছু সময়ের জন্য তাদের পথ রোধের চেষ্টা চালায়। লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, হামলার সময় মাহফুজ আলম গাড়িতে ছিলেন না। বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, পুরো সময় পুলিশ নিয়মিত যোগাযোগ রাখে এবং উপদেষ্টার সব কার্যক্রমে পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

বিজ্ঞাপন

লন্ডনের এই ঘটনা নিউইয়র্কে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর সংঘটিত হামলার ধারাবাহিকতা। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে নিউইয়র্কে সরকারি কাজে যোগদানকালে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে এক অনুষ্ঠানে বিক্ষোভকারীরা ডিম ও (বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী) বোতল নিক্ষেপ করে এবং কাচের দরজা ভাঙচুর করে। পরবর্তীতে কনস্যুলেট স্থানীয় কর্তৃপক্ষসহ স্টেট ডিপার্টমেন্টের আঞ্চলিক কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।

প্রধান উপদেষ্টা শফিকুল আলমের প্রেস সচিব প্রকাশ্যে এই হয়রানি চেষ্টার নিন্দা জানিয়েছিলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

বাংলাদেশের জনগণ এবং দুই দেশের কর্তৃপক্ষ সভ্যতা ও মূল্যবোধের পক্ষে অবস্থান করলেও এই ধরনের হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত দুর্বৃত্তরা বর্বরতা ও সহিংসতার জগতে বাস করছে। গণতন্ত্রে এমন কোনো আচরণের স্থান নেই যেখানে যুক্তির বদলে আক্রমণ এবং তর্ক-বিতর্কের পরিবর্তে সন্ত্রাসকে বেছে নেওয়া হয়।

নিউ ইয়র্কে হামলার পরেও সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল, সহিংসতা কোনো প্রতিবাদ নয়; ভয় দেখানো কোনো মত প্রকাশের স্বাধীনতা নয়। একই বক্তব্য লন্ডনের ঘটনায়ও পুরোপুরি প্রযোজ্য।

নিউ ইয়র্কের ঘটনার পর আমরা যে নীতিতে জোর দিয়েছিলাম এবারও তা পুনর্ব্যক্ত করছি: বাকস্বাধীনতা, সমাবেশ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ গণতন্ত্রের ভিত্তি, তবে তা অবশ্যই দায়িত্ব ও শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে।

কনস্যুলার যানবাহনকে টার্গেট করা এবং চলাচলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা কেবল দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়, এ আচরণ দুই দেশের মাঝে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষায় প্রচলিত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডকেও লঙ্ঘন করে। আমরা মেট্রোপলিটন পুলিশের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই এবং অপরাধীদের শনাক্ত করে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের আহ্বান জানাই।

যারা এই আচরণ সংগঠিত করেছে বা প্ররোচিত করেছে তাদের উদ্দেশ্যে আমরা বলতে চাই: শিশুসুলভ আচরণ থেকে বিরত থাকুন। যদি আপনারা সত্যিই আপনাদের নীতিতে বিশ্বাস করেন, তাহলে তা শান্তিপূর্ণভাবে, আইনগতভাবে এবং মর্যাদার সঙ্গে উপস্থাপন করুন। ডিম ছোড়া, মারামারি করা বা ভয়ভীতি প্রদর্শন কারো মন জয় করে না; বরং এতে শুধু প্রমাণ হয় যে আপনাদের আর কোনো যুক্তি অবশিষ্ট নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, আয়োজকগণ এবং প্রবাসীদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই, সভ্য সংলাপের পক্ষে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করুন। কঠিন আলোচনার আয়োজন করুন, কিন্তু এমন আচরণ বজায় রাখুন যা বক্তা, শ্রোতা এবং বৈধ প্রতিবাদকারী উভয়কেই সুরক্ষিত রাখে।

কে, কত জোরে চিৎকার করতে পারে বা কতটা সহিংস হতে পারে তা আন্দোলনের মাপকাঠি নয়, বরং আন্দোলনের মূল্যয়ন নির্ভর করে সেটি কতটা শৃঙ্খলা, মর্যাদা ও দায়িত্ববোধ বজায় রাখতে পারে সেসবের ওপর।

বাংলাদেশ সরকারের এ ঘটনায় ঘোষণা

১. মেট্রোপলিটন পুলিশকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত সম্পন্ন করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং ভিডিও ও অন্যান্য প্রমাণ ব্যবহার করে ভাঙচুর, হামলা ও প্রতিবন্ধকতায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছে।

২. প্রবাসী রাজনৈতিক নেতা ও সম্প্রদায় সংগঠকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে তারা যেকোনো সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট নিন্দা জানায়, দলীয় আনুগত্য যাই থাকুক না কেন।

৩. শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার পুনর্ব্যক্ত করছে—কিন্তু একইসঙ্গে কর্মকর্তাসহ শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের ভয় ছাড়া বক্তব্য রাখার ও সমাবেশ করার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে জোর দিচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গণতন্ত্র আবেগ দাবি করে; একইসঙ্গে আত্মসংযমও দাবি করে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশের পথচলায়, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা সুরক্ষিত, সেই লক্ষ্যে দুটিই অপরিহার্য।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর