Monday 15 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম বন্দর
‘ক্রান্তিকালে’ মাশুলের বোঝা, প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২২:৩০

চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ ‘অনিশ্চিত’ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন ‘ক্রান্তিকাল’ দেখছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা যখন টিকে থাকার লড়াই করছে, তখন চট্টগ্রাম বন্দর বিভিন্ন সেবাখাতে গড়ে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ (মাশুল) বাড়িয়ে দিয়েছে। বন্দরের এ সিদ্ধান্তকে ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে বিবেচনা করছেন ব্যবসায়ীরা।

বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, একলাফে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বন্দরের মাশুল বাড়ানোর ফলে রফতানিমুখী শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষত পোশাক খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সরাসরি। কারখানা বন্ধ হয়ে বেকারত্বের হার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এছাড়া, কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং, জাহাজের বিভিন্ন খাতে চার্জ বৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি পড়বে ভোক্তা অর্থাৎ সাধারণ মানুষের ওপর।

বিজ্ঞাপন

মাশুল বাড়ানো নিয়ে ব্যবসায়ীদের তীব্র আপত্তি থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সেবার মান আগের তুলনায় অনেকগুণ বেড়েছে। সে অনুপাতে দীর্ঘসময়ে মাশুল বাড়ানো হয়নি। সময় বিবেচনায় নিলে বর্ধিত মাশুলের তেমন প্রভাব পড়বে না।

প্রায় ৪০ বছর পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের বিভিন্ন সেবাখাতে মাশুল বাড়িয়েছে। ১৯৮৬ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন সেবা খাতে মাশুল বাড়ানো হয়েছিল। প্রায় ৪০ বছর পর অন্তর্বর্তী সরকার বন্দরের মাশুল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়।

জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৪১ শতাংশ হারে বর্ধিত মাশুল প্রস্তাব করলে আপত্তি জানায় বন্দর ব্যবহারকারীরা। ২ জুন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ট্যারিফ বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা তাদের আপত্তির বিষয় তুলে ধরে। কিন্তু শেষপর্যন্ত নৌপরিবহণ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে আইন মন্ত্রণালয় ঘুরে বন্দরের প্রস্তাবনা অনুসারেই ট্যারিফ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে সরকারি প্রজ্ঞাপনটি জারি হয়। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকেই সেটা কার্যকর করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ আজ (সোমবার) থেকেই বাড়তি মাশুল গুণতে হচ্ছে বন্দর ব্যবহারকারীদের।

চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৫২টি খাতে মাশুল আদায় করা হয়। সেখান থেকে ২৩টি খাতে সরাসরি বর্ধিত হারে মাশুল আদায় কার্যকর হয়েছে। বন্দর কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, মাশুল বাড়ানোর ক্ষেত্রে বন্দরের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছে স্পেনের প্রতিষ্ঠান আইডম। এশিয়ার ১০টিসহ ১৭টি আন্তর্জাতিক বন্দরের কার্যক্রম এবং ট্যারিফ পর্যালোচনা করেই চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে ট্যারিফ নিয়ে একটা মিটিং হয়েছিল। সেখানে অল ট্রেডবডি আমরা সম্মিলিতভাবে বলেছিলাম যে, ট্যারিফ যেন কোনোভাবেই ১০ থেকে ১২ শতাংশের ওপরে না যায়। তখন উপদেষ্টা আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। তিনি বিষয়টি ভেবে আরও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ প্রজ্ঞাপন জারি করে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হলো। এখানে বিভিন্ন খাতে ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ, কোথাও কোথাও আবার ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ বেড়ে গেছে।’

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্দর যখন ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল, তখন আমরা আপত্তি করেছিলাম। আমরা আপাতত ট্যারিফ যেন বাড়ানো না হয়, সেটা বলেছিলাম। আর যদি বাড়াতেই হয় তাহলে যেন সেটা ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে থাকে, সেটা বলেছিলাম। কিন্তু এখন ৪১ শতাংশ হারে ট্যারিফ কার্যকর করা হয়েছে। আমাদের আপত্তি আমলে নেওয়া হয়নি।’

দেশে আমদানি-রফতানিকেন্দ্রিক সমুদ্র বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ এবং কনটেইনার ও পণ্য পরিবহণের ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৭ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। ২০২৩ সালে করেছিল ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ টিইইউস। ২০২২ সালে ছিল ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউস। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর বছরে গড়ে ১৩ কোটি মেট্রিকটন কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং করে। একইসঙ্গে বছরে পণ্যবাহী ৪ হাজারের বেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং করে।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সবচেয়ে বেশি মাশুল বেড়েছে কনটেইনার পরিবহণ খাতে। প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা থেকে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা বেড়ে নতুন মাশুল দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা। এ হিসেবে প্রতি কনটেইনারে মাশুল বেড়েছে গড়ে ৩৭ শতাংশ।

আবার কনটেইনারবাহী জাহাজের ক্ষেত্রে আমদানি কনটেইনারের জন্য ৫ হাজার ৭২০ টাকা ও রফতানি কনটেইনারের জন্য ৩ হাজার ৪৫ টাকা মাশুল বেড়েছে। প্রতিটি কনটেইনার ওঠানামার ক্ষেত্রে মাশুল বাড়ানো হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। কনটেইনারের প্রতি কেজি পণ্যের জন্য মাশুল আগের ১ টাকা ২৮ পয়সার সঙ্গে আরও ৪৭ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। সার্বিকভাবে শুধুমাত্র ওঠানামাসহ কনটেইনার পরিবহণ খাতেই মাশুল বেড়েছে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ।

দেশে প্রধান রফতানিমুখী শিল্প হিসেবে বিবেচিত হয় তৈরি পোশাক খাত। আর এ খাতের পণ্য পরিবহণের পুরোটাই কনটেইনার জাহাজের ওপর নির্ভরশীল। বর্ধিত মাশুল তৈরি পোশাক খাতকে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে সরাসরি অ্যাফেক্টেড হবে পোশাক খাত। আমাদের কাঁচামাল আমদানির জন্যও বাড়তি ট্যারিফ দিতে হবে। আবার সেই কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পোশাক রফতানিতেও বাড়তি ট্যারিফ দিতে হবে। এমনিতেই আমেরিকায় আমাদের যে মার্কেট, সেটা গত কয়েকমাস ধরে ডাউন হয়ে আছে। ইউরোপের মার্কেট দিয়ে আমরা মোটামুটি কারখানাগুলো বাঁচিয়ে রেখেছি। কিন্তু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপের মার্কেটে ইন্ডিয়া ঢুকে যাবে। তখন আমর বড় ধরা খেয়ে যাব।’

‘কম্পিটেটিভ পোর্টগুলোতে তো হঠাৎ এত ট্যারিফ বসানো হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দর কেন, কার স্বার্থে হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিল আমরা জানি না। আমরা জোরালো আপত্তি করেছিলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এখন ভিয়েতনামের কস্ট, ইন্ডিয়ার কস্ট, শ্রীলঙ্কার কস্টের সঙ্গে যদি বাংলাদেশের কস্ট তুলনা করা হয়, তাহলে আমাদেরটা সবচেয়ে বেশি। সুতরাং রফতানির ক্ষেত্রেও আমাদের বাড়তি দাম দাবি করতে হবে। তখন মার্কেটটা চলে যাবে ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়া, শ্রীলঙ্কার হাতে। আর আমাদের দেশের কারখানাগুলো বিশেষত যেগুলো ছোট ছোট কারখানা আছে, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। হাজার, হাজার শ্রমিক বেকার হবে। এটা আমাদের জন্য এক বিরাট অশনিসংকেত।’

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জাহাজের ওয়েটিং চার্জ বেড়েছে ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় ১০০ শতাংশ। কোনো জাহাজ নির্ধারিত সময়ে ভিড়তে না পারলে অর্থাৎ ওয়েটিং টাইম ১২ ঘণ্টার বেশি হলে ১০০ শতাংশ, ২৪ ঘণ্টার জন্য ৩০০ শতাংশ, ৩৬ ঘণ্টার জন্য ৪০০ শতাংশ এবং ৩৬ ঘণ্টার বেশি হলে অতিরিক্ত চার্জ ৯০০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। জাহাজের পাইলর্টিং চার্জ ৮০০ মার্কিন ডলার এবং প্রতিবার জাহাজ টেনে আনার টাগ চার্জ ৬ হাজার ৮৩০ ডলার পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এই অতিরিক্ত চার্জের বোঝা আমদানিকারকদের এবং ক্ষেত্রবিশেষে রফতানিকারকদের বহন করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন জাহাজের ভাড়া বাড়বে, কনটেইনারে ভাড়া বাড়বে, ডেমারেজ চার্জ বাড়বে। কিন্তু মাদার ভ্যাসেলের প্রিন্সিপ্যাল যারা, মূল মালিক, তারা তো এই বাড়তি চার্জ দেবে না। কারণ, তারা তো ব্যবসা করতে এসেছে। তাদের লাভটা তো তারা বুঝে নেবে। এই অতিরিক্ত চার্জের বোঝাটা যাবে ম্যাক্সিমাম ইম্পোর্টারদের ওপর, এক্সপোর্টারদের ওপরও পড়বে। তারা হিমশিম খাবে। আবার তারাও সেটা চাপিয়ে দেবে ভোক্তার ওপর। আলটিমেট বোঝাটা বহন করতে হবে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে।’

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার রাখার ক্ষেত্রেও চার্জ বসানো হয়েছে। বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা পণ্যবোঝাই কনটেইনার খালাস না করে ইয়ার্ডে জট তৈরির প্রবণতা রুখতে চার্জ বাড়ানো হয়েছে। আমদানি করা এফসিএল কনটেইনারের ক্ষেত্রে প্রথম চারদিনের জন্য, রফতানিযোগ্য এফসিএল এবং এলসিএল কনটেইনারের জন্য প্রথম ছয়দিন ফ্রি টাইম রাখা হয়েছে। কিন্তু সপ্তম দিন থেকে চার্জ যুক্ত হবে। আর ২১ দিন পার হলে যুক্ত হবে ৬২ মার্কিন ডলার করে।

চট্টগ্রাম কাস্টম এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা। এভাবে ট্যারিফ আদায় করা হলে সার্বিকভাবে খরচের বোঝা বেড়ে যাবে। এটা তো সাধারণ ভোক্তাদের ওপর গিয়ে পড়বে। আমদানি পণ্যের অতিরিক্ত খরচ তো শেষপর্যন্ত সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হবে।’

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ও কার্গো পণ্য ওঠানামার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সংকটের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, বন্দরে গ্যান্টিক্রেন আছে মাত্র ১৮টি, যার মধ্যে ১৪টি নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে। চারটি আছে চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালে। এর বাইরে ১২টি জেনারেল কার্গো বার্থে পণ্য ওঠা-নামা হয় জাহাজের ক্রেন দিয়ে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, ‘বন্দরের প্রবেশ ফি বাড়ছে। পাইলটের চার্জ, ডেমারেজ চার্জ, লোডিং-আনলোডিংয়ের ফি বাড়ছে। অথচ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে সেবার মান বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। সেটা না করে অতিরিক্ত ট্যারিফ চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।’

শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাড়তি ট্যারিফ সার্বিকভাবে আমদানি-রফতানিকারকদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ, বাড়তি টাকাটা তো তাদেরকেই পরিশোধ করতে হবে। এটার অবশ্যই বিরূপ প্রভাব পড়বে। সব মিলিয়ে বলতে গেলে চাপটা আসবে ভোক্তার ওপর। উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্পগুলোর ওপর বাড়তি খরচের বোঝা চাপবে।’

চট্টগ্রাম বন্দরের আগে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রামের বেসরকারি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোগুলোতে (আইসিডি) প্রায় ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি চার্জ আদায় শুরু হয়। বেসরকারি ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সিদ্ধান্তে ২১টি আইসিডিতে একযোগে রফতানি পণ্য ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিভিন্ন খাতে বাড়তি চার্জ আদায় করা হচ্ছে। আইসিডিগুলোতে ২০ ফুট এককের একটি রফতানি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্যাকেজ চার্জ ছিল ৬ হাজার ১২৭ টাকা। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে সেটা বাড়িয়ে ৯ হাজার ৯০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। ৪০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনারের চার্জ ৮ হাজার ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ২০০ টাকা। সব মিলিয়ে অন্তত ২০ টি খাতে বর্ধিত চার্জ আদায় করছেন আইসিডি মালিকরা, যা সর্বোচ্চ ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত।

অফডকের পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত মাশুল আদায়কে ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ উল্লেখ করে শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে খুব ক্রাইসিস চলছে। বিনিয়োগ নেই। আমদানি-রফতানির গতি স্থবির। এটা তো ট্যারিফ বাড়ানোর সময় নয়। তার পরও অফডক বাড়িয়েছে। বন্দর বাড়িয়ে দিল। ইউএসএ শুল্ক বাড়িয়ে দিল। এটা যে ট্যারিফ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলছে। বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানো, এটা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। এটা নির্বাচিত সরকার এসে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হতো।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ’৩৯ বছর পর, ৪০ বছরের মাথায় এসে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে। অথচ প্রতিবেশি বন্দরগুলোতে নিয়মিত হারে ট্যারিফ বাড়ে। ট্যারিফ বাড়ানোর পরও চট্টগ্রাম বন্দরে সেই হার তাদের তুলনায় অনেক কম। যেমন– এক কনটেইনারের আনলোডিং চার্জ কলম্বোতে ১০০ ডলার, সিঙ্গাপুরে ৭৫ ডলার। আর চট্টগ্রামে এটি মাত্র ৪৩ দশমিক ৪০ ডলার। যেভাবে প্রভাবের কথা বলা হচ্ছে, আসলে ভোক্তা পর্যায়ে খুব নগণ্য প্রভাব পড়বে। সবকিছু বিচার-বিবেচনা করেই ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে।’

দেশের অর্থনীতির ‘লাইফলাইন’ চট্টগ্রাম বন্দর একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। সূত্রমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর আয় করেছে ৫ হাজার ২২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। একই অর্থবছরে তাদের খরচ হয়েছে ২ হাজার ৩১৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। মুনাফা হয়েছে ২ হাজার ৯১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরের নিট মুনাফার প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ।

লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের অসময়ে’ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে কেন মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হলো? এমন প্রশ্ন বন্দর ব্যবহারকারীদের।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

৪১ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর মাশুল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর