Monday 15 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গেমিং প্ল্যাটফর্ম থেকে যেভাবে প্রধানমন্ত্রী বেছে নিল নেপালের জেন-জিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০১:০৩

ছবি: সংগৃহীত

কাঠমান্ডুতে রাস্তায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল, রাজপথে চলছিল তীব্র সংঘর্ষ। মাত্র দুদিনের সহিংস বিক্ষোভে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ৭২ জন। অলি সরকারের পতন ঘটল সেই অস্থিরতার মধ্যেই—দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও গণতন্ত্রবিরোধী সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ তরুণরা নেমে এলো রাস্তায়। তবে ঘটনাবলি এখানেই থেমে থাকেনি। নেপালের জেন-জি প্রজন্ম এক অভিনব পথ বেছে নিল-রাজপথের আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে গেমারদের জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম ডিসকর্ডে অনলাইন ভোট আয়োজন করে তারা বেছে নিল অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী।

রাজপথ থেকে ভার্চুয়াল ভোটকেন্দ্রে

আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন ‘হামি নেপাল’ তাদের ডিসকর্ড চ্যানেল ‘ইয়্যুথ এগেইনস্ট করাপশন’-এ আনে এক নতুন উদ্যোগ। দেড় লাখেরও বেশি সদস্যের সেই চ্যানেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে উত্তপ্ত আলোচনা। দুর্নীতি দমন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা সংস্কার, স্বাস্থ্যসেবা ও পুলিশের জবাবদিহি—তরুণদের ভবিষ্যতের ভাবনায় উঠে আসে নানা প্রশ্ন।

বিজ্ঞাপন

শেষ পর্যন্ত অনলাইন ভোটে জয়ী হন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। তার দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান ও নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি তরুণদের আস্থা জিতেছিল সহজেই।

প্রথম নারী অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী

৭৩ বছর বয়সে ইতিহাস গড়লেন সুশীলা কার্কি—হলেন নেপালের প্রথম নারী অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী। শপথ নিয়ে ঘোষণা দিলেন, “আমরা ছয় মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকব না। দায়িত্ব শেষে নতুন সংসদ ও মন্ত্রীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করব।”

তার জনপ্রিয়তার পেছনে রয়েছে অতীতের সাহসী সিদ্ধান্ত। বিচারপতি থাকাকালে ২০১২ সালে দুর্নীতির দায়ে এক মন্ত্রীকে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। এমনকি সরকারের প্রস্তাবিত প্রার্থীকে পুলিশপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি অভিশংসনের মুখেও পড়েছিলেন। কিন্তু সবকিছু সত্ত্বেও তিনি তরুণ প্রজন্মের কাছে রয়ে গেছেন সততা ও দৃঢ়তার প্রতীক।

তরুণদের নতুন অভিজ্ঞতা

ডিসকর্ড চ্যানেলের আলোচনাকে তরুণরা দেখছে রাজনীতির অন্ধকার ঘরোয়া সমঝোতার বিপরীতে এক স্বচ্ছ প্রক্রিয়া হিসেবে। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজিনা বসনেত বললেন, “সংসদ ভেঙে দেওয়া বা অন্তর্বর্তী সরকার কী—এসব আমরা জানতাম না। প্রশ্ন করেছি, উত্তর শুনেছি, শিখেছি।”

তবে ঝুঁকির কথাও বলছেন বিশ্লেষকরা। ভুয়া অ্যাকাউন্ট কিংবা ভুল তথ্য দিয়ে প্রভাব খাটানোর সুযোগ ছিল। এজন্য আয়োজকরা আলাদা ‘ফ্যাক্টচেক’ চ্যানেল চালু করেছিলেন।

ডিজিটাল রাজনীতির সূচনা নাকি অনিশ্চয়তার নতুন অধ্যায়?

বিশ্লেষকদের মতে, নেপালের রাজনৈতিক সংকট এখনও শেষ হয়নি। বরং শুরু হয়েছে নতুন এক পরীক্ষার। তরুণ প্রজন্ম একদিকে রাজপথে প্রতিবাদ করছে, অন্যদিকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নেতৃত্ব গড়ে তুলছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক সভাপতি পদ্মিনী প্রধানাং বললেন, “আগের সরকারগুলো স্বচ্ছতা ও সুশাসনে ব্যর্থ হয়েছে। তরুণদের এখন সেই জায়গাগুলো পূরণ করতে হবে।”

সামনে কী?

সামনের মার্চে নতুন সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পডেল। তার আগ পর্যন্ত সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারই নেপালের রাজনৈতিক দিকনির্দেশ ঠিক করবে।

সারাবাংলা/এসএস

গেমিং জেন জি নেপাল প্রধানমন্ত্রী প্ল্যাটফর্ম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর