ঢাকা: পুঁজিবাজারের সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং ক্যাপিটেক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের কর্মকাণ্ডকে ঘিরে নানা অনিয়ম, দুর্বল ব্যবস্থাপনাসহ ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করার অভিযোগ রয়েছে। এই কোম্পানি দুটির পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ বিধিবহির্ভূতভাবে বিনিয়োগ এবং আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার মতো গুরুত্বর অভিযোগের কারণে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ১৮টি শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে তিন সদস্যের দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত দুইটি পৃথক আদেশ জারি করা হয়েছে। তদন্তের বিষয়টি ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যাপিটেক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে বলে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী। আর ক্যাপিটেক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন এম. মাহফুজুর রহমান।
ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আমদাদুল হক এবং সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল্লাহ খান ও মো. আশরাফুল হাসান।
আর ক্যাপিটেক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক সুলতানা পারভিন, সহকারী পরিচালক মো. শাকিল আহমেদ ও সহকারী পরিচালক মো. হাসান।
ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ডগুলো হলো- ১. ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান ও ২. ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালেন্সড ফান্ড।
এ ছাড়া ক্যাপিটেক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ডটি হলো- ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গঠিত তদন্ত কমিটি ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যাপিটেক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনায় থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ডসমূহের নগদ ও নগদ সদৃশ সম্পদ এবং সিকিউরিটিজ বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার হয়েছে কি-না তা তদন্ত করে দেখবে। এছাড়া কোম্পানিটির দুইটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনা ব্যক্তিবর্গ (কেএমপি) কোনো বেআইনি কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত কি-না তা খতিয়ে দেখবে। একইসঙ্গে ফান্ডগুলোর তহবিলের মেয়াদকালে কী পরিমাণ ভুয়া আয় হয়েছে এবং কোন সময়ে সেটা প্রতিবেদন করা হয়েছে তা নিরূপণ করবে। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বর্তমান পর্যন্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে কী পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে এবং অ্যাসেট ম্যানেজার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে কি-না যাচাই করে দেখা হবে। পাশাপাশি তদন্তকারীরা ফান্ডগুলোর নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) ও ইউনিটহোল্ডারদের মূল্যের অবনতির পেছনে অব্যবস্থাপনা বা সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার কোনো ভূমিকা আছে কি-না সেটাও খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এই অনুসন্ধান আদেশ এলআর গ্লোবালের কার্যক্রমে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে এবং দীর্ঘদিনের নানা গরমিল ও জবাবদিহিহীনতা উন্মোচনে সহায়ক হবে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় বিএসইসির এই পদক্ষেপকে তারা সময়োপযোগী বলে অভিহিত করেছেন। বসে