ঢাকা: পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ক্রমান্বয়ে কমে আসবে। এ অবস্থায় এসব সুবিধার ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখার প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন অ্যান্ড স্ট্রাকচারাল ট্রান্সফরমেশন’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) এই সেমিনারের আয়োজন করে।
ইআরডি’র এক সংবাদ বিজ্ঞিপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে এলডিসি হিসেবে পাওয়া বিভিন্ন বাণিজ্যিক সুবিধা কমে আসবে। এসব সুবিধা না থাকলেও যাতে বাংলাদেশের রফতানিমুখী শিল্পগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারে, সেজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য।
বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এতে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। একই সঙ্গে তিনি সুলভ ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎস অনুসন্ধানের ওপর জোর দেন। পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার দেশের রপ্তানি পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বাড়াবে বলেও জানান তিনি।
সেমিনারের সভাপতি ও ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, বিভিন্ন দেশ, উন্নয়ন সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কাঠামোগত রূপান্তরে আর্থিক, কারিগরি এবং বাণিজ্য সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই সমন্বিত কার্যক্রমের একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ সম্প্রতি প্রণীত ‘স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি’-তে দেওয়া হয়েছে, যার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. জুলফান তাজুদিন। তিনি বলেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব, সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা এবং ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় কাঠামোগত রূপান্তরের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে তিনি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের পাশাপাশি জনগণের ক্ষমতায়ন এবং ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ওপর জোর দেন।
উল্লেখ্য, পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকালীন সময় শেষে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে। এই উত্তরণ টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হলে শিল্পের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং অর্থনীতির বহুমুখীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।