নীলফামারী: নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা। সীমান্তঘেঁষা এ জনপদে প্রতিবছর তিস্তা নদীর ভাঙন ও হঠাৎ বন্যায় অসংখ্য পরিবার বিপর্যস্ত হয়। মানুষের জানমাল উদ্ধারের জন্য ২০২০ ও ২০২১ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি আধুনিক রেসকিউ বোট বরাদ্দ দেয়। উদ্দেশ্য ছিল বন্যার সময় দ্রুত উদ্ধারকাজ পরিচালনা করা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই নৌকা দুটি এখন কেবল স্মৃতি। রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানির অভাবে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে অকেজো অবস্থায়। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
প্রযুক্তিসম্পন্ন নৌকা, অবহেলায় অচল
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রতিটি এক কোটি টাকার বেশি মূল্যে এই দুটি উদ্ধারকারী নৌকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৫৪ ফুট লম্বা এবং ১২.৫ ফুট প্রস্থের প্রতিটি নৌকা ৮০ জন যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ৭ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। নৌকা দুটি খগাখরিবাড়ি ইউনিয়নের পাগলপাড়া এবং ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ডনের সাইড ঘাট এলাকায় রাখা হয়েছিল।

রেসকিউ বোট নীলসাগর
তবে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বর্তমানে নৌকাগুলো প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। রোদ-বৃষ্টিতে এর লোহার কাঠামোয় মরিচা ধরেছে, জানালা ও কেবিনের অংশ ভেঙে গেছে এবং ইঞ্জিন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে কোনো কাজ করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নৌকার মাঝি জানান, নৌকাটি ২০২১ সাল থেকে এখানে থাকলেও ন্যূনতম মেরামত বা রং করা হয়নি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত ১০ মাস ধরে তাদের বেতনও বন্ধ রয়েছে।
বাজেট ছিল, কাজ হয়নি
পাগলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘গত দুই-তিন বছরে নৌকা দুটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হলেও কোনো কাজ হয়নি। সব টাকা কর্মকর্তাদের পকেটে গেছে।’
ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলার কারণে সরকারি এই সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। আমরা বারবার বিষয়টি জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
তিস্তাপাড়ের কৃষক আজিজুল ইসলাম জানান, ‘আমরা ভেবেছিলাম বন্যার সময় নৌকাগুলো কাজে লাগবে। কিন্তু এখন দেখি মরিচা পড়ে আছে।’
এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকাগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় দুঃখজনক। আমরা দ্রুতই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নৌকাগুলো সচল করার উদ্যোগ নেব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, ‘আমি নিজে বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করব।’
নীলফামারী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মনোয়ারুল ইসলাম জানান, ‘তিনি সম্প্রতি এই দফতরে যোগদান করেছেন। আগের কর্মকর্তাদের বিষয়ে তিনি জানেন না। তবে, সরকারি সম্পদ রক্ষায় তিনি উদ্যোগ নেবেন।’