ঢাকা: বিগত সরকারের আমলে (২০২৪ সালের আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে) নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত ও অ-ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল বা নিয়মিতকরণে বিশেষ নীতি সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর আওতায় চলতি বছরের গত ৩০ জুন পর্যন্ত বিরূপমানের শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ বিবেচনায় ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ২ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদে ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে। তবে যেসব ঋণ ইতোমধ্যে তিনবার বা তার বেশি পুনঃতফসিল করা হয়েছে, সেখানে অতিরিক্ত ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট জমা দিতে হবে। এ পুনঃতফসিল সুবিধা পেতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সব ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ঋণ পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্তগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নিজেরাই অনুমোদন ও কার্যকর করতে পারবে। তবে অনুমোদনের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার সম্ভাব্য ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা যাচাই করতে হবে। আবেদনের ৬ মাসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হবে। ৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব না হলে আন্তঃব্যাংক সভার কার্যবিবরণীসহ প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাছাই কমিটি বরাবর আবেদন পাঠাতে হবে। তবে জালিয়াতি, প্রতারণা বা ঘোষিত ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কোনো সুবিধা দেওয়া হবে না।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিশেষ সুবিধা দেওয়া ঋণের বিপরীতে সাধারণ প্রভিশন রাখতে হবে। প্রকৃত আদায় ছাড়া ব্যাংকের আয় খাতে অর্থ স্থানান্তর করা যাবে না, তবে প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য স্থানান্তর করা যাবে। এসব ঋণের বিপরীতে নতুন সুবিধাও দেওয়া যাবে, তবে এর আগে গ্রাহকের আর্থিক অবস্থা ও পূর্ববর্তী লেনদেন যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। এছাড়া সুবিধা দেওয়ার পর কোনো শর্ত ভঙ্গ হলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের সব সুবিধা বাতিল হবে এবং ব্যাংক ঋণ আদায়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে।

-ছবি : প্রতীকী ও সংগৃহীত
নীতি সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্য হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী অনেক ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। এতে ঋণ বা ঋণের কিস্তি পরিশোধে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয় প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের কেউ কেউ ঋণসংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং ও আনুষঙ্গিক সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হয়ে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চালাতে পারেনি। এতে তারা খেলাপি হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ব্যাংকের ঋণ আদায় কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব পড়ে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের আর্থিক কাঠামোকে ঝুঁকির সম্মুখীন করেছে। এ প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন, ব্যাংক খাতে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরিয়ে আনা, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা ফেরানো এবং সম্ভাবনাময় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে সচল ও লাভজনক করার মাধ্যমে ব্যাংকের ঋণ আদায় নিশ্চিত করতে নীতি সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বিগত সরকারের সময়ে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ সুবিধা দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা হলেও সরকার পতনের পর খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়তে থাকে। ইতোমধ্যে এ খাতের ঋণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ বিবেচনায় পুনঃতফসিলের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছিল। এখন সেই ক্ষমতা ব্যাংকগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হলো।