ঢাকা: সিঙ্গাপুর সরকার বাংলাদেশের বে টার্মিনালের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের লজিস্টিকস ও বন্দর ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান-এর সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে এ তথ্য জানান সিঙ্গাপুরের অনাবাসী হাইকমিশনার ডেরেক লো ইউ-সে। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিজিএমইএ’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, লজিস্টিকস এবং বন্দর ব্যবস্থাপনা ও লজিস্টিক উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন কৌশলগত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে পোশাক শিল্পে শ্রম সংক্রান্ত ইস্যু, মার্কিন শুল্ক এবং পোশাক শিল্প সংক্রান্ত সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার ডেরেক লো ইউ-সে জানান, সিঙ্গাপুর সরকার বাংলাদেশের বে টার্মিনালের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। বিশ্বব্যাপী কন্টেইনার ট্র্যাফিক হ্যান্ডলিং-এ দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিঙ্গাপুরের রয়েছে বিপুল অভিজ্ঞতা, উন্নত দক্ষতা এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এই সক্ষমতা ব্যবহার করে সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের লজিস্টিকস ও বন্দর ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। হাইকমিশনার বন্দরের দক্ষতা কীভাবে বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে বিজিএমইএ সভাপতির কাছে মতামত জানতে চান।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, এই ধরনের যেকোন সহযোগিতা বন্দর হ্যান্ডলিং এর সময় কমিয়ে আনতে, শিপিং প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত করতে এবং আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সামগ্রিক খরচ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আলোচনায় বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বিজিএমইএ’র প্রত্যাশা তুলে ধরেন।
বৈঠকে সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার জানান, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে তারা বাংলাদেশের বর্তমান ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান।
বিজিএমইএ সভাপতি জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা তুলে ধরে বলেন, জনগনের প্রত্যাশা অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ কমানো, দক্ষতা বাড়ানো এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মতো বিষয়গুলোতে বেশকিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনারকে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিশীল খাতে বিনিয়োগের জন্য সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, এফটিএ ছাড়াও সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন।
হাইকমিশনার বলেন, বিনিয়োগকারীদের শতভাগ মুনাফা প্রত্যাবসন (প্রফিট রিপ্যাট্রিয়েশন) নিশ্চিতকরণ বিনিয়োগ আকর্ষণের একটি পূর্বশর্ত। তিনি বিনিয়োগকারীদের জন্য শতভাগ মুনাফা প্রত্যাবসন নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।
বিজিএমইএ সভাপতি সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের রফতানি বৈচিত্র্যকরণে, বিশেষ করে কৃষিজাত পণ্য ও ফলমূল রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টিতে সিঙ্গাপুর হাইকমিশনের সহযোগিতা কামনা করেন।
বৈঠকে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার বিজিএমইএ নেতাদেরকে সিঙ্গাপুরে পোশাক রফতানি বাড়াতে উচ্চ-মূল্য সংযোজিত পোশাক, বিশেষ করে প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের উচ্চ মূল্যের পোশাক তৈরির বিষয়ে পরামর্শ দেন।
হাইকমিশনার বিজিএমইএ সভাপতিকে সিঙ্গাপুরের বন্দর কার্যক্রম সচক্ষে দেখার জন্য একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে সিঙ্গাপুর সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন।