ঢাকা: সারাদেশে আন্দোলনে কোনো বাধা দেয়নি সরকার। শেখ হাসিনাও আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি বলেননি। এমনটিই দাবি করেছেন শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জেরার সময় এমন দাবি করেন তিনি। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন গণঅভ্যুত্থানের এই নায়ক।
সাক্ষী হিসেবে নাহিদ ইসলামের দেওয়া সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করেন শেখ হাসিনার আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি বলেন, ‘সারাদেশে আন্দোলনে কোনো বাধা দেয়নি সরকার। শেখ হাসিনাও আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি বলেননি। তার কথার মর্ম সঠিকভাবে না বুঝে আন্দোলন তীব্রতর করা হয়েছিল।’
পরে সাক্ষী বলেন, ‘মূলত আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি বলে আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের উসকানি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।’
আমির হোসেন আরও বলেন, ‘আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগই যথেষ্ট বলে দেওয়া বক্তব্যটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত অভিমত।’
এ সময় সাক্ষীর ডায়াস থেকে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সেক্রেটারির বক্তব্য কী কখনো ব্যক্তিগত হয়? দলের পক্ষ থেকে তিনি বলেছেন। যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, সেহেতু তার বক্তব্য দলের ও দলীয় প্রধানের বক্তব্য হিসেবে বিবেচিত হবে।’
একপর্যায়ে আমির হোসেন বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে উজ্জীবিত হয়ে নারী শিক্ষার্থীদের নির্যাতন চালায়নি ছাত্রলীগ। আন্দোলনে আহত ছাত্র-ছাত্রীদের চিকিৎসায় বাধাও দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া জানমাল রক্ষার স্বার্থেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’ তবে আন্দোলন দমন করার উদ্দেশ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও ঘেরাও করা হয়েছিল বলে জানান সাক্ষী।
স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীর দাবি, সরকারকে বেআইনিভাবে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে গত বছরের ১৮ জুলাই সর্বস্তরের জনগণকে আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সমন্বয়করা।
জেরা শেষে এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের অপমানিত করেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলতে চেয়েছিলেন যদি কোনো রাজাকারের নাতিপুতি থাকে; কথাটা এমন ছিল। কিন্তু তা ঢালাওভাবে ছাত্ররা নিজেদের গায়ে নিয়ে আন্দোলন বেগবান করেছে। অর্থাৎ বৈধ সরকারকে উৎখাত করার জন্য তাদের আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল।’
এদিন সকাল সোয়া ১১টা থেকে ট্রাইব্যুনালে ৪৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন নাহিদ ইসলাম। দুপুরে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিরতি দেওয়া হয়। বিরতি শেষে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। তবে জেরা শেষ না হওয়ায় আগামী রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর সহিদুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার পালোয়ান ও মামুনুর রশীদসহ অন্যরা।