Thursday 18 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোয়েস্ট বিডিসির অনিয়ম-দুর্নীতি
শিবলী-রিয়াজকে পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধের সুপারিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:৫৮

ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোয়েস্ট বিডিসির (সাবেক পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার) কার্যক্রম পরিচালনায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম এবং সাবেক বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম-কে পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি। এছাড়াও এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ লিমিটেডের নিবন্ধন বাতিল এবং বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রেরণের সুপারিশ করেছে কমিটি।

বিজ্ঞাপন

তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, কোয়েস্ট বিডিসির পরিচালক ও এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলামকে এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্ররোচনা ও সহযোগিতা করেছেন বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত। আর রিয়াজ ইসলামের অন্যান্য সহযোগী হিসেবে কোয়েস্ট বিডিসির চেয়ারম্যান ও এলআর গ্লোবালের উপদেষ্টা রেজাউর রহমান সোহাগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহসান, পরিচালক মেদিনা আলী এবং প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ানের প্রতিনিধি পরিচালক সৈয়দ কামরুল হুদাসহ আরো কয়েকজন জড়িত ছিলেন। পাশাপাশি নিরীক্ষিক, ভ্যালুয়ার ও তৎকালীন বিএসইসির ক্যাপিটাল ইস্যুর কর্মকর্তারও এ অনৈতিক কাজে তাদেরকে সহযোগিতা করেন।

প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের সবাইকে বড় অংকের অর্থদণ্ড (ন্যূনতম ১ কোটি টাকা জারিমানা) আরোপ করা, ফৌজদারি মামলা দায়েক করা এবং এলআর গ্লোবালের অধীনে থাকা মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে ফোরেনসিক অডিট সম্পন্ন করে ফান্ডের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ারও সুপারিশ করেছে কমিটি।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তন পর গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ১২টি অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতি অনুসন্ধানের লক্ষ্যে বিএসইসির গঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন সব সুপারিশ উল্লেখ করা হয়েছে।

বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, কোয়েস্ট বিডিসির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বেশি দামে মালিকানার শেয়ার কেনা, ছয় ফান্ড থেকে নিজেসহ এলআর গ্লোবালের কর্মকর্তাদের পরিচালক পদে বসানো, যোগসাজোস করে সম্পদের ভ্যালুয়েশন তৈরি, অবৈধভাবে তহবিলের ব্যবহার, অবৈধভাবে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো, অনুমোদনবিহীন ব্যবসা পরিচালনা করা, সিকিউরিটিজ অইন লঙ্ঘন, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করার মতো গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ বিএসইসির তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধেও ঘুষ, দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ তুলেছে তদন্ত কমিটি।

তবে বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড আল ইসতানিয়া ও আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রীন জিরো ক্যুপন বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে অনিয়ম, প্রভাব খাটানো, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দায়িত্বশীল আচরণ না করার অভিযোগে শিবলী রুবাইয়াতকে আগেই পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বিএসইসি।

অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি মনে করে, রিয়াজ ইসলামের নেতৃত্বে ফান্ডের অপব্যবহার ও বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে। ফান্ডগুলোর নিবন্ধন বাতিল করে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরতের জন্য লিকুইডেশন করতে হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অর্থদণ্ড আরোপ করা জরুরি। বিএসইসি যথাযথ কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়মের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিএসইসি’র গঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি ১২টি বিষয়ের উপর তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে উল্লিখিত সুপারিশের আলোকে সার্বিক দিক বিবেচনা করে কিছু কিছু বিষয়ে অভিযুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আরো অনেক বিষয় কমিশন পর্যবেক্ষণ করছে। শিগগিরই সেসব বিষয়ের উপর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রিয়াজ ও শিবলীর যোগসাজস

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান ও রিয়াজ ইসলামের যোগসাজোসে এলআর গ্লোবালের ছয় মিউচ্যুয়াল ফান্ডের টাকায় পদ্মা প্রিন্টার্সের ৫১ শতাংশ শেয়ার কিনে নেওয়া হয়। উদ্যোক্তা-পরিচালকের প্রায় সব শেয়ার উচ্চ দরে প্রতিটি ২৮৯.৪৮ টাকা করে কিনে নেন। এরপর ছয় মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে নিজেসহ এলআর গ্লোবালের ছয় কর্মকর্তাকে পরিচালক পদে বসানো হয়। তৎকালীন বিএসইসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত উল ইসলাম পদ্মা প্রিন্টার্সের মূল স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারদের তাদের শেয়ার বিক্রির জন্য প্ররোচিত করেছেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। সে সময় পদ্মা প্রিন্টার্সের শেয়ার ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে হস্তান্তরের অনুমোদন প্রদানের পুরো প্রক্রিয়াটি অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

আর এলআর গ্লোবালের ব্যবস্থাপনায় থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে তালিকাবহির্ভূত কোম্পানি ও সিকিউরিটিজে সন্দেহজনক বিনিয়োগের মাধ্যমে অপব্যবহার করেছে, যা ফান্ডগুলোর মূলধনের ক্ষতিকে আরও বাড়িয়েছে। রিয়াজ ইসলাম নেতৃত্বে এলআর গ্লোবাল মিউচুয়াল ফান্ডের তহবিলের সঙ্গে দুর্নীতি ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। তাই শিবলী ও রিয়াজকে পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত বিষয়ে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।

সারাবাংলা/একে/আরএস

কোয়েস্ট বিডিসির অনিয়ম-দুর্নীতি পুঁজিবাজার শিবলী-রিয়াজকে নিষিদ্ধের সুপারিশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর