ইসরায়েলি সেনারা দুই দিক থেকে অগ্রসর হয়ে গাজা নগরীর কেন্দ্রে চাপ সৃষ্টি করেছে। টানা বিমান ও স্থল হামলায় আতঙ্কে হাজারো মানুষ পশ্চিমের উপকূলীয় সড়কের দিকে পালাচ্ছেন। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, নগরীর শেষ “লাইফলাইন”ও ভেঙে পড়ছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি এবং হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব আনা হলেও যুক্তরাষ্ট্র ফের তাতে ভেটো দিয়েছে।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলি সেনারা দুই দিক থেকে অগ্রসর হয়ে গাজা নগরীর কেন্দ্রের দিকে চাপ সৃষ্টি করছে। এতে স্থানীয়দের যেন এক প্রকার “স্যান্ডউইচ”-এর মতো মাঝখানে আটকা ফেলে উপকূলের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আর এর উদ্দেশ্য, তাদের নগরীর সবচেয়ে বড় এই জনবসতিপূর্ণ এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র নাদাভ শোশানি বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন, পদাতিক, ট্যাংক ও আর্টিলারির সমন্বয়ে কেন্দ্রের দিকে অভিযান চালানো হচ্ছে, যার পেছনে বিমানবাহিনীরও সমর্থন রয়েছে। এর লক্ষ্য সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে চাপে ফেলা।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, সেনারা উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর হয়ে মানুষকে পশ্চিম দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর এদিকেই আল-রাশিদ উপকূলীয় সড়ক দক্ষিণে চলে গেছে। তিনি বলেন, “ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হামলায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ আক্ষরিক অর্থেই জীবন বাঁচাতে ছুটছে। আমরা এখন ঢেউয়ের মতো মানুষের স্রোত দেখতে পাচ্ছি।
গাজা নগরীর বাসিন্দারা আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, হামলা থামছে না। ড্রোন ও যুদ্ধবিমান থেকে বোমা বর্ষণের পাশাপাশি সেনারা দূরনিয়ন্ত্রিত “রোবট” ব্যবহার করছে। এগুলো বিস্ফোরকভর্তি মানববিহীন যান এবং এই অস্ত্র দিয়ে পুরো মহল্লা ধ্বংস করা হচ্ছে।
শুধু বৃহস্পতিবারই গাজা নগরীতে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে।
এই পরিস্থিতিতে পালানো পরিবারগুলোকে আবারও বাস্তুচ্যুত হওয়ার কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, এমন এক ভূখণ্ডে যেখানে কোনো “নিরাপদ অঞ্চল” নেই। এবার শঙ্কা, হয়তো আর কখনো ঘরে ফেরাও সম্ভব হবে না।
তবুও অনেকেই রয়ে গেছেন। ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, মঙ্গলবার পর্যন্ত গাজার উত্তরাঞ্চলে এখনো প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার মানুষ — মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশ — আটকা রয়েছেন। তবে সংস্থাটি সতর্ক করেছে, নিরবচ্ছিন্ন হামলা ও মৌলিক সেবার পতনের কারণে এই সংখ্যা দ্রুত কমতে পারে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দপ্তর (ওসিএইচএ) বৃহস্পতিবার সতর্ক করেছে, গাজা নগরীর শেষ লাইফলাইনও ভেঙে পড়ছে।
ওসিএইচএ অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল পদ্ধতিগতভাবে ত্রাণ ঢোকার পথ রুদ্ধ করছে। তারা জিকিম ক্রসিং বন্ধ রেখেছে, যার মাধ্যমে দুর্ভিক্ষপীড়িত উত্তরে সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব ছিল, পাশাপাশি অনেক খাদ্যপণ্য প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
গাজা নগরীর বাইরে, অন্য এলাকায়ও ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোরে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে তাদের চার সেনা নিহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে অভিযোগ করেছে, গাজায় বিমান হামলায় যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিকের মধ্যে পার্থক্য করার আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতাকে ইসরায়েল স্পষ্টতই অবহেলা করছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে। প্রস্তাবটিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছিল।