ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগমের বিরুদ্ধে অনিয়ম–দুর্নীতির তদন্ত এবং দীর্ঘ ১৪ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। পাশাপাশি চাকরিচ্যুত আট শিক্ষককে পুনর্বহাল ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধের আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন সদ্য চাকরিচ্যুত সহকারী শিক্ষক সৈয়দা আরিফুন নাহার।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগম প্রতিষ্ঠানের ব্যয় এবং ঘাটতির যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ ও বানোয়াট। ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের আয় হয়েছে (টিউশন ফি, দোকানের অগ্রিম টাকা ও মাসিক আয়, এলিভেটেট এক্সপেসওয়ের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ সহ) প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের ৪৬ মাসের বেতন বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। ফলে প্রায় ১৩ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকার কথা। কিন্তু তবুও ১৪ মাস ধরে শিক্ষকদের বেতন বকেয়া রয়েছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন—প্রতিষ্ঠানের আয় থাকলেও কেন বেতন বকেয়া হচ্ছে। বেতন থেকে কাটা হলেও প্রফিডেন্ট ফান্ডে জমা হয় না কেন টাকা? গ্রাচুয়িটি ফান্ড শূন্য, খাতা দেখা, ডিউটি এরিয়া বাবদ কোন ভাতা কেন দেওয়া হচ্ছে না।
আরিফুন নাহার বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগম শিক্ষকদের বেতন না দেওয়ার মূল কারণ প্যাটার্ন ও বিধি বহির্ভূত অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ বলে উল্লেখ করেন। তাহলে ২০০৪ সালে ১০ নভেম্বর নিম্নমাধ্যমিক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে কীভাবে নিয়োগ পান, যেখানে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষকদের কোন পদই নাই। ২০০৪ সালে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল ছিল।
তিনি ভারপ্রাপ্ত মরিয়ম বেগমের বিরুদ্ধে ফাইল গায়েবের অপরাধে বরখাস্ত হওয়া, ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার পর থেকেই আজ্ঞাবহ শিক্ষকদের দিয়ে গ্রুপিং ও পক্ষপাতিত্ব শুরু করার অভিযোগ করে বলেন, ঘনঘন শিক্ষকদের রুটিন পরিবর্তন সহ নানা কারণে শিক্ষার মান নিম্নমুখী হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তার সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের কোচিং ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ ও সহযোগিতা করেন। মরিয়ম বেগম সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অডিটে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে দাবি করেছেন, আমি ওই রিপোর্ট প্রকাশ করার আবেদন করছি। তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বহিরাগতদের ডেকে এনে সংবাদ সংগ্রহে আসা সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি।
সৈয়দা আরিফুন নাহার আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেতন না পাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করলে আমাকে শোকজ ও প্রতিষ্ঠানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যদিও এই সিদ্ধান্ত নিয়ম বহির্ভূত। পরবর্তীতে ৮ জন শিক্ষক কর্মচারীকে ক্রমান্বয়ে নানা অজুহাতে শোকজ করেন। এভাবে তিনি শিক্ষকদের মাঝে ভীতির সঞ্চয় করেন এবং যাতে কেউ আর বেতনের জন্য আবেদন না করেন। বেতন না পেয়ে একজন বিধবা শিক্ষকের আত্মহত্যার চেষ্টাকে সাজানো ‘নাটক’ বলে তাচ্ছিল্য করেছেন মরিয়ম বেগম। আরিফুন নাহার বলেন, আমরা সবাই আবার চাকরিতে ফিরতে চাই। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার চাই।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের পর অদ্যাবধি শিক্ষার মান অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। প্রশাসনের উদাসীনতায় ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলেই মাদক সেবন করছে এবং টিকটক বানাচ্ছে। আমি সকল শিক্ষকের পক্ষ থেকে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য এবং শিক্ষকদের ১৪ মাসের বেতন বকেয়া হওয়ার কারণ জানতে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন করি। কিন্তু অজানা কারণে তদন্ত আসছে না বা থেমে আছে।
সংবাদ সম্মেলনে সহকারী প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান হাওলাদার অভিযোগ করেন, তাকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং চেয়ারেও বসতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি দ্রুত এ পরিস্থিতির অবসান চান।
সংবাদ সম্মেলনে চাকরিচ্যুত ও ভুক্তভোগী শিক্ষক–কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।