ঢাকা: ‘তথ্যে তারুণ্যে নিত্য সত্যে’ স্লোগানকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ার শিক্ষক লাউঞ্জে ডুজার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কেক কাটেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা। এ সময় ডুজার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য খায়রুজ্জামান কামালও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রশাসন, সাবেক ও বর্তমান সাংবাদিক সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা বলেন, ‘সাংবাদিকরা কেবল তথ্য পরিবেশনের কাজই করেন না, বরং শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘বিতর্কের ঊর্ধ্বে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা সহজ নয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা সেই কঠিন কাজটি দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করছেন। তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংগতি ও ইতিবাচক কার্যক্রম সমানভাবে প্রতিফলিত হয়।’
তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশাসনের ইতিবাচক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে জানান, অনেক সময় সাংবাদিকদের তথ্য প্রশাসনকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের ওপর গুরুত্বারোপ করেন উপ-উপাচার্য। তিনি প্রস্তাব দেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দফতর এবং অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের যুক্ত করে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা যেতে পারে। এতে নতুন সাংবাদিকরা আরও বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নবনির্বাচিত ভিপি আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা নেতা নই, শিক্ষার্থীদের সেবক। ফ্যাসিবাদী সময়ে যখন শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তখন সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা পাশে দাঁড়িয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল এবং ৯ দফা দাবিপত্র সংবাদমাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছিল।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা আমাদের ভুল ধরিয়ে দেয়, পরামর্শ দেয় এবং সমালোচনার মাধ্যমে পথ দেখায়। তাই আমরা সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে চাই, যাতে তারা আরও দক্ষতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।’
আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য খাইরুজ্জামান কামাল স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে সংগঠনটি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে।’
বর্তমান সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি বলেন, ‘আমাদের এই পথচলায় অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে, কিন্তু সেগুলো আমাদের টলাতে পারেনি। আমরা বিশ্বাস করি, সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠতা ও সাহসী ভূমিকা ভবিষ্যতেও বিশ্ববিদ্যালয় ও সমাজকে পথ দেখাবে।’
চার দশকের পথচলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি শুধু ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ঐতিহ্য রক্ষা করেনি, বরং জাতীয় সাংবাদিকতা আন্দোলনেও রেখেছে অগ্রণী ভূমিকা। বক্তাদের আশা, সংগঠনটির এই ধারাবাহিকতা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
ডুজার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা ও কেক কাটার পর উৎসবমুখর পরিবেশে ডাকসুর সামনে থেকে কলা ভবনের রাস্তা এক বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটি চার দশক ধরে সাংবাদিকতা জগতে পেশাদারিত্ব ও বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে।