‘আমি কি আপনার চাকর’ মুক্তিযোদ্ধাকে বললেন চিকিৎসক [ ভিডিও সহ ]
৮ জুলাই ২০১৮ ১৫:০৫
।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ‘আমি কি আপনার চাকর? যা বেটা’ বলে চিৎকার করছেন একজন চিকিৎসক। এটি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গত ৬ জুলাই ভোরের ঘটনা। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৭০ বছর বয়সী একজন মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবার সদস্যদের সঙ্গে এভাবে চরম দুর্ব্যবহার করেছেন ওই চিকিৎসক। এ সময় তিনি মারমুখি আচরণও করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে লাঞ্ছনার শিকার মুক্তিযোদ্ধার নাম শেখ ফারুকুজ্জামান। তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ নম্বর-ম ৯১১২৭৩। মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী চিকিৎসকের নাম বিপুল বলে প্রেসক্রিপশন থেকে জানা গেছে।
ওই চিকিৎসকের দুর্ব্যবহার সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফারুকুজ্জামানের ছেলে শেখ দুর্জয় জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন একজন চিকিৎসক হয়ে তিনি আমাদের সঙ্গে যা করেছেন সেটি কোনোভাবেই একজন চিকিৎসক করতে পারেন না। তিনি তুই তোকারি করেছেন, অশ্লীল ভাষায় কথা বলেছেন, তার হাসপাতালের স্টাফদের ডেকেছেন আমাদের আটকে ফেলতে।’
দুর্জয় জামান বলেন, ‘গত ৬ জুলাই বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাকে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে আমার বাবাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ইসিজি করার পর চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলাটা ছিল কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি।
সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, কর্তব্যরত চিকিৎসক অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করছেন।’
https://youtu.be/SVlY0DWlGY4
পরিবারের দাবি- ইসিজি করার পর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফারুকুজ্জামানকে ভর্তি করার কথা বলেন চিকিৎসক। বারান্দায় শুতে হবে, মুক্তিযোদ্ধা কেবিন খালি নেই। কেবিন ব্লকে গিয়ে তিন থেকে চারটি কেবিন তালাবদ্ধ দেখতে পাই, যার মানে কেবিনগুলো ‘অ্যাভেইলেবল’ ছিল।
দুর্জয় বলেন, ‘কেবিন ইনচার্জের সঙ্গেও কথা বলি। তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধা কেবিন অকুপায়েড। কিন্তু ভিআইপি কেবিন ফাঁকা রয়েছে জানালে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা ভিআইপি না। কথা শুনে খারাপ লাগল। এ দেশে যদি মুক্তিযোদ্ধারা ভিআইপি না হন সেটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।’
‘সেখানে চিকিৎসকের ব্যবহার এবং কেবিন না পাওয়াতে সিদ্ধান্ত নিই হাসপাতাল থেকে চলে আসার।’
আমার বাবা চিকিৎসককে বলেন, ‘এখানে তো সিট পাচ্ছি না, তাই চলে যাবো।’
আমার বাবা ওই চিকিৎসকে আমার এক চিকিৎসক চাচার রেফারেন্সও দেন। তখন তিনি বলেন, ‘যান ওনার কাছে চলে যান, এইখানে কেন আসছেন? লাগবে না ছাড়পত্র, ওনার কাছে চলে যান।’
তখন ফারুকুজ্জামান বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এভাবে কথা বলবেন না। কিন্তু এই কথাটা শুনেই যেন তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। খুব খারাপ ব্যবহার করেন আমাদের পুরো পরিবারের সঙ্গে।’
তাকে বললাম, ‘আপনি একজন চিকিৎসক হয়ে যদি এভাবে কথা বলেন তাহলে সেটি ঠিক না। একজন অশিক্ষিত মানুষের মত আচরণ আপনি করতে পারেন না।’
‘আপনি সবার সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করছেন-এটা তো আপনি করতে পারেন না।’ দুর্জয় বললে তখন তিনি হাসপাতালের তাদের যারা লোকজন আছেন, তাদেরকে ডাকতে বলেন। সব স্টাফদের ডেকে আমাদের আটকাবে-এমন একটা পরিস্থিতি তারা তৈরি করেন। বলতে থাকেন, আমি কি আপনার চাকর। ফ্রিডম ফাইটার হয়ে এ ছেলে করছেন, যা বেটা।
সে কথাই বলছিল, তুই-তোকারি করে। কিন্তু সে যখন দেখতে পায় ভিডিও করা হচ্ছে তখন সে যান যান বলে চিৎকার করতে থাকে।
দুর্জয় জামান বলেন, ‘আমার বাবার সঙ্গে এরকম আচরণের প্রতিবাদ করতে না পেরে নিজেকে সত্যিই খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। আইন অনুযায়ী একজন মুক্তিযোদ্ধা জীবনদশায় উপযুক্ত সম্মান পাওয়ার দাবিদার। সরকারি হাসপাতালগুলোতেও একজন মুক্তিযোদ্ধার পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’
কিন্তু বাস্তবে এই মুক্তিযোদ্ধারাই আমাদের দেশে সবচেয়ে লাঞ্ছিত হয়ে থাকেন বলেন শেখ দুর্জয় জামান।
ভিডিও ফুটেজ দেখে এমদাদুল হক তুহিন নামে একজন সারাবাংলার কাছে অভিযোগ করেন গত কয়েকমাস আগে তিনি তার মামাকে নিয়ে ওই হাসপাতালে গেলে সেদিন ডিউটিতে এই চিকিৎসক ছিলেন। কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া তাকে বলে দেন যে, রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত। কিন্তু পরদিন হাসপাতালে পরীক্ষা করে জানা গেছে তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত ছিলেন না।’
ওই হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বলেন, ‘ডা. বিপুলের নামে এর আগে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে রোগীরা লিখিত অভিযোগও করেছেন। একজন চিকিৎসক ও একজন অধ্যাপককে মারধরের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।’
ডা. বিপুলের আচরণের বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
সারাবাংলা/জেএ/একে