সিলেট: বাংলাদেশের প্রশাসন কাঠামোতে এমন দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়—একজন জেলা প্রশাসক, যিনি শুধু সরকারি ফাইল ঘাটেন না, বরং মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে কোরআন-হাদিসের আলোকে সমাজের পথনির্দেশনা দেন। সিলেটের নতুন ডিসি মো. সারওয়ার আলম যেন সেই ব্যতিক্রমী চিত্রের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
গতকাল শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের সময় সিলেট নগরীর ঐতিহ্যবাহী হযরত শাহ নাসির উদ্দীন রহ. (শাহচট) জামে মসজিদে তার বক্তব্য শুনে অনেকেই অবাক। বক্তৃতা নয়, যেন মন ছুঁয়ে যাওয়া এক মানবিক আহ্বান—সমাজ সংস্কারের, সততার, নৈতিকতার এবং আইনের শাসনের।
ভাষণ নয়, যেন এক ইসলামী খুতবা
অন্তত আধঘণ্টা ধরে সরল অথচ গভীর এক ভাষায় তিনি তুলে ধরেন সমাজে ছড়িয়ে থাকা অনৈতিকতা, দুর্নীতি, মাদক, জুয়া ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান। তার কণ্ঠে কোরআনের আয়াত, হাদিসের উদ্ধৃতি এবং বাস্তব জীবনের উদাহরণ—সব মিলিয়ে উপস্থিত মুসল্লিদের মনে দাগ কাটে।
অনেকে মন্তব্য করেছেন, ‘এই ভাষণ কোনো আলেমের মুখে শুনলেও হয়তো এতটা নাড়া দিত না। একজন প্রশাসকের কণ্ঠে এভাবে সত্য উচ্চারণ ছিল অভাবনীয়।’
অবৈধ হোটেল, লাইসেন্সহীন ব্যবসা—রেহাই নেই
বক্তব্যের একপর্যায়ে ডিসি সাফ জানিয়ে দেন—সিলেটের পবিত্র ভূমিতে কোনো অপরাধ সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, ‘অনেক হোটেল চলছে, যাদের কোনো বৈধতা নেই। আগামী সপ্তাহে আমরা নোটিশ দেব। নিয়মের বাইরে গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
তার এই ঘোষণা সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যেই আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তীর-শিলং বন্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি
আরেকটি আলোচিত অংশ ছিল সিলেটের তীর-শিলং জুয়া নিয়ে তার কঠোর হুঁশিয়ারি। ‘কারা চালাচ্ছেন, কারা খেলছেন—সব তথ্য আসছে। রোববার আদেশ জারি হবে। এরপর কাউকে পাওয়া গেলে ছাড় নেই।’
এমন কঠোর অথচ মানবিক বার্তা অনেকেই দেখছেন নতুন এক প্রশাসনিক ধারার সূচক হিসেবে।
শুধু প্রশাসক নন, জনমানুষের কণ্ঠস্বর
ডিসি সারওয়ার আলম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সিলেটের দীর্ঘদিনের সমস্যা—হকার পুনর্বাসন, ফুটপাত দখল, ট্রাফিক শৃঙ্খলা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। তবে এবার তার মসজিদভিত্তিক উদ্যোগ তাকে নিয়ে এক নতুন পরিচয়ে পরিচিত করেছে—‘জনতার ডিসি’।
সামাজিক মাধ্যমে তুমুল প্রশংসা
তার বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। অনেকেই বলছেন—‘এমন ডিসি পেলে বদলে যেতে পারে পুরো জেলা, এমনকি গোটা দেশ।’ প্রশাসনের পোশাকে একজন মুমিনের অন্তর, দায়িত্বে একজন অভিভাবকের কণ্ঠ—ডিসি সারওয়ার আলম আজ সিলেটবাসীর জন্য শুধু একজন সরকারি কর্মকর্তা নন, বরং আশার প্রতীক।