ঢাকা: বাংলাদেশ এখন এক গুরুতর উন্নয়ন সংকটে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নির্ভরযোগ্য জলবায়ু তথ্যের অভাব জাতীয় অগ্রগতি ও অভিযোজন প্রচেষ্টাকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক কর্মশালায় সরকারি কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা দেশের জলবায়ু পরিমাপ সক্ষমতার ভয়াবহ ঘাটতি তুলে ধরেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সাইদুর রহমান সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু তথ্য ছাড়া, জাতীয় তথ্য ছাড়া আমরা প্রমাণ হাজির করতে পারব না। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাস্তবায়নে ঘাটতি চিহ্নিত করাই এখন জরুরি।’
তথ্যের এই ঘাটতি বহু খাতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এর ফলে একের পর এক উন্নয়ন সংকট তৈরি হচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের (আইডব্লিউএফএম) অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো অভিযোজনের পরিমাপযোগ্য কোনো সূচক নেই। পানিসহ অনেক খাতে সূচক মাপা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। যেমন—নিরাপদ পানির প্রবেশাধিকার, সেচ ব্যবস্থা, প্রাথমিক বন্যা পূর্বাভাস ব্যবস্থা।’
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিএডি)-এর কর্মশালায় ৩০ জন স্টেকহোল্ডার অংশ নেন। আলোচনায় উঠে আসে—দৃঢ় জলবায়ু তথ্যের অভাবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তহবিল পেতে পারছে না এবং কার্যকর উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নও ব্যাহত হচ্ছে।
হাওর এলাকার কমিউনিটি প্রতিনিধিরা তথ্যসংগ্রহ ব্যর্থতার বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরেন। তারা বলেন, ‘একটি বেসলাইন জরিপ বা ঝুঁকি মূল্যায়ন করলে প্রকল্পগুলো যথাযথ সূচক ব্যবহার করে বাস্তবায়ন ও প্রতিবেদন করা সম্ভব হতো।’
সি-থ্রিইআর এর রৌফা খানম মৌলিক পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা প্রমাণ তৈরি করতে পারি না কারণ আমাদের পদ্ধতি খুবই দুর্বল। তথ্য সরবরাহকারীরা সঠিক পদ্ধতি দিতে ব্যর্থ হন। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যও অপর্যাপ্ত। আমরা এখনো মূলত বিবিএসের তথ্যের ওপর নির্ভর করি।’
সি-ফোরই-এর ড. আবু সাইদ বিষয়টির অর্থনৈতিক দিক উল্লেখ করে বলেন, ‘বৈশ্বিক উন্নয়ন সূচকগুলোকে জিজিএ’র সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে দেখাতে হবে কতজন মানুষ কত শতাংশ আয় বাড়াতে পারছে অভিযোজনের মাধ্যমে।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যথাযথ তথ্য না থাকলে কমিউনিটি তাদের অভিযোজনের প্রয়োজন বা অগ্রগতি প্রমাণ করতে পারবে না।’
বিশ্বব্যাংকের সূচকেও এসব শাসন ঘাটতির প্রতিফলন রয়েছে।
সিপিআরডি’র মো. শামসুদ্দোহা বিষয়টিকে ন্যায়ের প্রশ্নের সঙ্গে যুক্ত করে বলেন, ‘পদ্ধতিগত অবিচারের কারণে আমরা পরিবেশ উন্নয়ন কার্যকরভাবে করতে পারছি না। স্থানীয় পর্যায়ে প্রক্রিয়াগত অবিচার না মেটালে অভিযোজন সম্ভব নয়।’
কর্মশালায় আরও উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয় ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্যসংগ্রহে পর্যাপ্তভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। রৌফা খানম বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থানীয় পর্যায়ে তথ্যসংগ্রহে অংশ নিতে হবে। বৈশ্বিক পর্যায়ে কোনো নথি জমা দেওয়ার আগে তা বৈজ্ঞানিকভাবে সরকার পর্যায়ে যাচাই করা আবশ্যক।’