রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিতর্কিত পোষ্য কোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-কর্মকর্তারা পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা করলে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটকে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবনে উপ-উপাচার্য ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আটকে রেখেছেন তারা।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় শিক্ষক ফোরামের কর্মবিরতি ঘোষণার পরই এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে গত ছয় ঘণ্টা ধরে জুবেরী ভবনে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও জনসংযোগ দফরের কয়েকজন প্রশাসক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাতাহাতির পর অবরুদ্ধ রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব তার বাসভবনে শিক্ষকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন।
রাবি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মো. আব্দুল আলিম জানিয়েছেন, শিক্ষক অপদস্তের বিচারের দাবিতে তারা আগামীকাল রোববার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি রাখছেন এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন তারা।
অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা (কিছু অনশনে থাকা ছাত্রসহ) জুবেরী ভবনের বিভিন্ন কক্ষে হামলা–ভাঙচুর এবং উপাচার্যের বাসভবনের গেইটে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখন বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন ছাত্রশিবির-ছাত্রদলসহ বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
রাবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘আর মাত্র চার দিন পর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটি মীমাংসিত ইস্যু—পোষ্য কোটাকে সামনে এনে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ এখানে দলমত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে এসেছে। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য— এই অযৌক্তিক পোষ্য কোটাকে আর ফিরতে দেওয়া যাবে না।’
রাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সরদার জহুরুল বলেন, ‘নির্বাচনের একটা সুন্দর পরিবেশ ছিল। আমাদের শিক্ষকরা সেটাকে বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে গেছেন। তারা যেন মীমাংসার মাধ্যমে পোষ্য কোটা বাতিল করে রাকসু নির্বাচন দেন। ২৫ তারিখেই রাকসু দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে যেন বিশ্ববিদ্যালয় চলে। এটাই আমাদের দাবি থাকবে।’
রাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল শাহরিয়ার (শুভ) বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি ছিল ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু আজ আমাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে যে হামলা চালানো হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা ঘোষণা করছি যে, পোষ্য কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ও আমাদের ন্যায্য অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই ভবন ছাড়ব না। পাশাপাশি আমাদের ওপর যে সহিংসতা হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার হওয়া প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য স্যারকে অবরুদ্ধ করে তার বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে আমরা জুবেরি ভবনের লাউঞ্জে বসি। সেখানে শিক্ষার্থীরা আবারও আমাদের বাধা দেয়। আমরা ফিরে গিয়ে পুনরায় আসার পর ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে তারা আবারও বাধা দেয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই আমার হাতের ঘড়ি ও সঙ্গে থাকা ১০ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। ধাক্কাধাক্কি হতে পারে, কিন্তু আমার হাতের ঘড়ি ও ১০ হাজার টাকা হারিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়।’