Sunday 21 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাবেক মন্ত্রী জাবেদের দেশ-বিদেশের সম্পদের ২৩ বস্তা নথি উদ্ধার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:৪৬ | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:১৫

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে এক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে মামলার ২৩ বস্তা আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে জাবেদের দেশে-বিদেশে অর্জিত সম্পদ ও টাকা পাচারের গুরুত্বপূর্ণ আলামত এসব নথিপত্র কঠোর গোপনীয়তায় এক বাড়িতে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা এলাকার সিকদার বাড়ি থেকে এসব আলামত জব্দ করা হয়েছে।

দুদকের চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ সারাবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

দুদক জানায়, সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া জাবেদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের দুই সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আব্দুল আজিজ ও উৎপল পালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসব আলামত জব্দ করা হয়েছে। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন জাবেদের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকা পাচার সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান।

বিজ্ঞাপন

গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে ওই মামলায় দুইজনকে নগরীর ডবলমুরিং থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে দুদকের টিম। এরপর তাদের আদালতের নির্দেশে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে আরামিট গ্রুপের এজিএম (ফিন্যান্স) উৎপল পাল সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে বিদেশের সম্পদ অর্জন ও দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। তার কাছ থেকে জব্দ করা দুটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইলে এ সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়। উৎপল দেশ থেকে দুবাই এবং দুবাই থেকে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে জাবেদের পরিবারের অর্থ পাচার প্রক্রিয়ার মাস্টারমাইন্ড।

অন্যদিকে আব্দুল আজিজ আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়ামের এজিএম হিসেবে জাবেদের সম্পদ কেনা-বেচা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। গ্রেফতার আব্দুল আজিজ মামলাটির এজাহারভুক্ত আসামি। আর দুদকের তদন্তে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা উঠে আসায় উৎপলকে গ্রেফতার করা হয়।

গত ২৪ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে-১ এ মামলাটি করেন। মামলায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী, ভাই-বোন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৩১ জনকে আসামি করা হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা আরামিটের কর্মকর্তাদের নামে পাঁচটি নামসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে গম, ছোলা, হলুদ ও মটর আমদানির জন্য ১৮০ দিনের মধ্যে ফেরতযোগ্য ‘টাইম লোন’ আবেদন করেন। নিজ পরিবারের মালিকানায় থাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে (ইউসিবিএল) এ আবেদন করা হয়।

ইউসিবিএল থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর হওয়ার পর সেই টাকা একই ব্যাংকে বাকি চারটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা অ্যাকাউন্ট নম্বরে বিভিন্ন অঙ্কে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেই টাকা পাচার করা হয়।

গ্রেফতার আব্দুল আজিজের নামে ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছিল। ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে আত্মসাত করা টাকার কিছু অংশ সেই প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছিল।

দুদক বলছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ মন্ত্রী থাকার সময় ২০১৯-২০ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনা ঘটে।

আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে তার বিরুদ্ধে বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাকে আর পরবর্তী সরকারে মন্ত্রী হিসেবে দেখা যায়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগমুহুর্তে জাবেদ তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।

ওই মামলার সূত্রে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির জন্য আদালতে আবেদন করেছে দুদক।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

চট্টগ্রাম বস্তা নথি উদ্ধার সাবেক মন্ত্রী জাবেদ

বিজ্ঞাপন

ফোন রিস্টার্ট দেওয়া কেন জরুরি
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:১৫

আরো

সম্পর্কিত খবর