ঢাকা: একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি দুর্বল ইসলামী ব্যাংকের আমানতকারীদের সুরক্ষায় একটি পেমেন্ট স্কিম প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ স্কিমের আওতায় আমানতের অর্থ ফেরত প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তিশ্রেণির আমানতকারীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আর প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের নগদ অর্থের পরিবর্তে নবগঠিত ব্যাংকের শেয়ারের মালিকানার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। তবে এর আগে ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া (ডিলিস্টেড) হবে। অন্যদিকে, ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না। ঋণের কিস্তি নিয়ম মতো পরিশোধ করতে হবে। খেলাপি হলে বিদ্যমান নিয়মেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন ব্যাংকগুলো হচ্ছে- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত আমানতের পরিমাণ ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তি শ্রেণির আমানতের পরিমাণ প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা। অবশিষ্ট আমানত প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের।
সূত্র মতে, আমানতকারীরা কী পরিমাণ অর্থ ফেরত পাবেন, পুরো অর্থ ফেরত দেওয়া হবে কি না কিংবা কী প্রক্রিয়ায় অর্থ ফেরত দেওয়া হবে- সেটি নির্ভর করছে বিদ্যমান ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন ২০০০’-এর চূড়ান্ত খসড়া সংশোধনীর ওপর।
উল্লেখ্য, দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষা ও আর্থিক খাতের ওপর জনগণের আস্থা বাড়াতে বিদ্যমান ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন ২০০০’ রহিত করে ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই এর একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু এটি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। খসড়া অনুযায়ী, প্রত্যেক আমানতকারীর জন্য সর্বোচ্চ সুরক্ষা আমানতের পরিমাণ হবে ২ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র মতে, আর ২ লাখ টাকার বেশি আমানত ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়া হতে পারে। তবে এ জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা চূড়ান্ত হয়নি। কোনো আমানতকারীর যদি একাধিক অ্যাকাউন্ট (তালিকাভুক্ত পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে) থাকে, তাহলে সেগুলো একটি হিসাব হিসেবে গণ্য হবে এবং মোট বীমার সীমা থাকবে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। একীভূতকরণের মধ্যবর্তী সময়ে আমানতকারীরা ৪ শতাংশ হারে নির্দিষ্ট রিটার্ন পেতে পারেন, তবে সব বিদ্যমান আমানত স্কিম বাতিল হয়ে যাবে।
‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুযায়ী, ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিলের দুই মাসের মধ্যেই এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
সূত্র জানায়, এ পাঁচ ব্যাংকের সমস্বয়ে গঠিত হবে বড় আকারের একটি শরীয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক। এর সম্ভাব্য নাম হবে- ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। নতুন এ ব্যাংকটির জন্য শিগগিরই লাইসেন্স ইস্যু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাঁচ ব্যাংক একীভূত হওয়ার পর নতুন ব্যাংকের সম্পদ দাঁড়াবে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এর পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা আসবে সরকারের কাছ থেকে, ১০ হাজার কোটি টাকা ডিপোজিট ইনসুরেন্স ফান্ড থেকে, আর ৫ হাজার কোটি টাকা আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হবে।
সূত্র মতে, একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার পাঁচটি ব্যাংকই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত। তবে একীভূত হওয়ার পর সেগুলো ডিলিস্ট করা হবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, অবসায়ন বা একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী নন। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করছে।
ডিলিস্টিং প্রক্রিয়া ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈঠক করবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর সঙ্গে।
ডিএসই’র তথ্য মতে, গত আগস্ট শেষে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে পাবলিক শেয়ারহোল্ডিং ছিল ১৮ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৩১.৪৬ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৬৫ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংকে ৩১ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকে ৩৯.২৮ শতাংশ।