রাজশাহী: পোষ্য কোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চলমান উত্তেজনা ও অচলাবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন রাকসু নির্বাচনকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। উপ-উপাচার্য ও প্রক্টর লাঞ্ছনার জেরে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি এবং কমপ্লিট শাটডাউনের ডাক দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। ফলে, নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রাকসুর প্রার্থীরা।
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট-এ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে এই পরিবেশেও নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বৈঠক শেষে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
অন্যদিকে কর্মবিরতি ও শাটডাউনের কারণে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। এতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। ফলে নির্বাচনি কার্যক্রমে প্রার্থীরাও শঙ্কা ও সংশয় প্রকাশ করছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় রাকসু নির্বাচনের ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পোষ্য কোটা বাতিল ও ২৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের দাবিতে আমরা অনড় আছি। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখছি। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি নির্বাচনে সহযোগিতা না করেন, তাহলে নির্বাচন খুবই কষ্টকর হবে। ২০ তারিখের ঘটনায় সব প্যানেলের প্রচারে ভাটা পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেছেন। প্রশাসনের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই উৎসবমুখর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের পালস বুঝে কাজ করতে হবে।’

ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ (বাম দিক দিয়ে), শেখ নূর উদ্দীন আবীর, তাসিন খান ও ফুয়াদ রাতুল। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা
ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবীর বলেন, ‘আমরা পোষ্য কোটা বাতিলের পক্ষে। কিন্তু গুটিকয়েক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী বেশি তৎপর, তারা নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। এই পরিস্থিতিতে ঝড়ঝাপটা বেড়ে গেছে। হলে হলে খোঁজ নিয়ে দেখেন, অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেছেন। এই মুহূর্তে জানি না, নির্বাচন হবে কি না। তবে আমি নির্বাচন না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি দেখছি। সেক্ষেত্রে ছাত্রদলের চাওয়া পূজার ছুটির পরেই নির্বাচন হোক।’
‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী তাসিন খান বলেন, ‘বর্তমানে ক্যাম্পাসে স্থিতিশীল পরিস্থিতি নেই, প্রশাসন যদি স্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে তাহলে ২৫ তারিখেই রাকসু হোক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না করে রাকসু দিলে সেটার আমরা বৈধতা দেবো না।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক এবং ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেছেন। আর পোষ্য কোটা নিয়ে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’
প্রসঙ্গত, শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রশাসনিক ভবন থেকে গাড়ি নিয়ে বের হলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাকে আটকে বিক্ষোভ করেন। পরে তিনি গাড়ি থেকে নেমে বাসভবনের দিকে গেলে শিক্ষার্থীরা তার বাসভবনে তালা দেন। পরে উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের দিকে যান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের জুবেরী ভবনে ঢুকতে বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এরপর উপ-উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জুবেরী ভবনে আটকে রেখে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।
এরপর রাত ১০টায় শিক্ষক-কর্মকর্তারা পুনর্দিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিলে ১৭টি হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে এসে ভিসির বাসভবনের সামনে আন্দোলন করতে থাকেন। তুমুল আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রাত ১টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। অপরদিকে শিক্ষক লাঞ্চনার প্রতিবাদের কর্মবিরতিতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।