সাতক্ষীরা: কপোতাক্ষ অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত টানা ছয় বছর পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম চালু ছিল। এ সময়ে ১ হাজার ৫৬২ একর জমিতে জোয়ার-ভাটা চলার কারণে কৃষিজমিতে কোনো ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়নি। সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ সময়ের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও জমির মালিকেরা মাত্র দুই বছরের ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। বাকি চার বছরের বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রায় ৪৮ কোটি টাকা এখনও বকেয়া রয়ে গেছে।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের পক্ষ থেকে দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের কথা।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, টিআরএম বাস্তবায়নের ফলে কপোতাক্ষ অববাহিকার অন্তত ১৫ লাখ মানুষ সরাসরি এবং প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে। নদী তার নাব্যতা ফিরে পেয়েছে, জীববৈচিত্র্যের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ছয় বছর কৃষি উৎপাদন বন্ধ থাকায় পাখিমারা বিলের মানুষ সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন। কর্মসংস্থানের অভাব, ঋণগ্রস্ততা, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হওয়া এবং চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা বলেন, বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও বকেয়া ক্ষতিপূরণের বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এর ফলে ক্ষতিপূরণ না পেয়ে টিআরএম বন্ধ হয়ে গেছে। কপোতাক্ষ নদ আবারও পলিতে ভরাট হয়ে নতুন করে জলাবদ্ধতার ঝুঁকিতে পড়ছে বিশাল এলাকা। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের অনিশ্চয়তার কারণে স্থানীয়রা নতুন করে টিআরএম বাস্তবায়নেও অনাগ্রহী হয়ে পড়ছেন।
এ অবস্থায় দ্রুত ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সময়মতো ক্ষতিপূরণ না দিলে কপোতাক্ষ অববাহিকায় জলাবদ্ধতার তীব্রতা আরও বাড়বে এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চল আবারও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) কার্যক্রমের ক্ষতিপূরণের বকেয়া অর্থ দ্রুত প্রদানের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা স্মারকলিপি স্মারকলিপি প্রদান করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার বরাবর।
স্মারকলিপিতে বিল অধিবাসীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন পাখিমারা বিল কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল আলীম, সহসভাপতি গোলদার আশরাফুল হক, সদস্য শেখ রজব আলী, মো. রাশেদ সানা, মো. ছফেদ আলী সরদার, মো. রেজাউল করিম গাজী, তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান, সদর উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি মো. মফিজুর রহমান।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের জলাবদ্ধতা নিরসনে এবং নদীগুলোকে সচল রাখতে ব্যবহৃত একটি বিশেষ পদ্ধতি হলো টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম)। এই পদ্ধতিতে নদীর একটি নির্দিষ্ট অংশে বাঁধ নির্মাণ করা হয়, কিন্তু বাঁধের কিছু অংশ খোলা রাখা হয়। এই উন্মুক্ত অংশ দিয়ে জোয়ারের সময় পলিযুক্ত পানি ভেতরে প্রবেশ করে এবং ভাটার সময় সেই পানি বেরিয়ে যায়, যা পলিকে সরিয়ে দেয়। এভাবে নদী গভীর হয়, নাব্যতা বাড়ে এবং জলাবদ্ধতা দূর হয়।
টিআরএম হলো এমন একটি কৌশল যেখানে নদীর পলি সরিয়ে নদীকে সচল রাখতে জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক শক্তিকে ব্যবহার করা হয়। এটি অনেকটা প্রাকৃতিক উপায়ে নদীর ‘নিজস্ব পরিচর্যা’ করার মতো, যেখানে মানুষ শুধু একটি নির্দিষ্ট অংশ খুলে দিয়ে এই প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে।