Tuesday 23 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণহারে শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ বাগছাস নেতার বিরুদ্ধে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:১২

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি। ছবি: সংগৃহীত

রংপুর: রংপুর নগরীর হারাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করা প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীকে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্কুলের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতির বিরুদ্ধে।

ঘটনাটি বেশ কয়েকদিন আগের হলেও মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জানাজানি হওয়ার পর অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে। ইমতিয়াজ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের মহানগর কমিটির সাবেক আহ্বায়ক।

মারধরের এই ঘটনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তির অবসান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি এবং অভিভাবকদের ক্ষোভ শিক্ষা ব্যবস্থার শৃঙ্খলার দুর্বলতা প্রকাশ করে। ইমতিয়াজের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং স্কুল কমিটির দায়িত্বে থাকার পরও এমন আচরণ নৈতিকতার প্রশ্ন তুলেছে।

বিজ্ঞাপন

ভুক্তোভোগী, অবিভাবক ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বিদ্যালয়ে গিয়ে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ফেল করা শিক্ষার্থীদের বাঁশের লাঠি দিয়ে মারধর করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ সময় উপস্থিত শিক্ষকরা তাকে বাধা দেননি। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, ইমতিয়াজ তাদের পরীক্ষার ফলাফল জিজ্ঞেস করে ফেল করা শিক্ষার্থীদের গণপিটুনি দেন।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাওন কবির বলেন, ‘পেছন থেকে ক্লাসে ঢুকে একে একে রেজাল্ট জিজ্ঞেস করছিলেন। আমি দুই সাবজেক্টে ফেল বলায় আমাকে তিনটি আঘাত করেছেন। অন্যদের আরও বেশি মারা হয়েছে।’ দশম শ্রেণির রাহানুল ইসলাম হৃদয় বলেন, ‘দু’টি সাবজেক্টে ফেল বলায় আমাকে পিটুনি দেওয়া হয়।’ আরেক শিক্ষার্থী আইরিন আক্তার জানান, আমাকে দুই হাতে মারা হয়েছে। বান্ধবীদেরও মারা হয়েছে। দুয়েকজন ছাড়া সবাই মার খেয়েছে।’

অভিভাবক ইয়াকুব আলী বলেন, ‘আমার ভাতিজির হাত ফুলে গেছে। ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়েছে। সভাপতি কেন বাচ্চাদের মারবেন? অপর অভিভাবক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আমরা স্কুলে গেলে ইমতি প্রথমে ক্ষমা চান, কিন্তু পরে পুলিশ নিয়ে এসে হুমকি দেন। প্রধান শিক্ষক এই অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।’

ঘটনার দু’দিন পর অভিভাবক ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের কাছে বিচার দাবি করেন। দুই শিক্ষার্থীর বড় ভাই পরশুরাম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তবে প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ইমতিয়াজ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় উৎসাহ দিয়েছেন। বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে।’

ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, ‘একটু রাগারাগি ও শাসন করেছি। ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর কোনো অভিযোগ নেই। এলাকার কিছু ব্যক্তি ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করেছে। বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে।’

রংপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমাকে এ বিষয়ে জানানো হয়নি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

তবে শিক্ষা কর্মকর্তার তদন্তের ফলাফল এবং প্রধান শিক্ষকের মীমাংসার দাবি এই ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

সারাবাংলা/পিটিএম

অভিযোগ বাগছাস নেতা শিক্ষার্থীদের মারধর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর