ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫ পরবর্তী প্রার্থীদের আবেদন ও অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের উপ-পরিচালক ফররুখ মাহমুদ সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।
শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী উমামা ফাতেমা, ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আবদুল কাদেরসহ অন্যদের অভিযোগের বিষয়ে চারটি পয়েন্টে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডাকসু এবং হল সংসদগুলোর নির্বাচন পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা আবেদনপত্র বা দরখাস্তগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। শুদ্ধতার জন্য যেক্ষেত্রে প্রযোজ্য সেক্ষেত্রে আইনগত মতামতও নেওয়া হয়েছে। নিজস্ব পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রত্যেকটি দরখাস্ত বা আবেদনপত্র বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে জবাব দেওয়া হবে।
কিন্তু সোমবার একটি ছাত্রসংগঠন কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে (মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছে) উচ্চারিত কিছু অভিযোগের জবাব এখন দেওয়া সমীচীন উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, দুটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। একটি হলো কয়েকজন দরখাস্তকারী বা আবেদনকারী নির্বাচনের দিন ধারণ করা এবং পরবর্তীতে সংরক্ষণকৃত সিসি ক্যামেরার ফুটেজের পুরোটাই চেয়েছেন। বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা এবং বিজ্ঞ আইনজীবীদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ কোনো পাবলিক ডকুমেন্ট নয়।
কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ধারণ ও সংরক্ষণ করা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত আমানত, যা নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাহায্যকারী সাক্ষ্য হিসেবে বা ডকুমেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা যায়। আবেদনপত্রগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে অনেকটাই অস্পষ্ট (vague) এবং সুনির্দিষ্ট কি কারণে, কোন সময়ের, কোন বিষয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে হবে, তা দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়নি।
এ অবস্থায় কতিপয় দরখাস্তে কতগুলো সাধারণ প্রশ্নমালা (Broad Questions) কিংবা কতগুলো অত্যন্ত ব্যাপকতর বিষয়ে (wide area) প্রশ্নের অবতারণা করা হয়েছে, যেগুলোতে তেমন কোনো সারবত্তা নেই এবং আবেদনকারীদের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগও নেই। তথাপি কোনো প্রার্থী যদি সুনির্দিষ্ট কোন সময়ের বা কোনো একটি প্রাসঙ্গিক ঘটনা পর্যালোচনা করার জন্য সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চান, তারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত বিশেষজ্ঞ বা মনোনীত ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত কোনো স্থানে তা দেখতে বা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে।
দ্বিতীয়ত যে বিষয়টি বলা হয়েছে, সেটি হলো- ভোটপ্রদানকারী ভোটারদের সই তালিকা প্রদানের অনুরোধ। এ ক্ষেত্রেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ মনে করে, এটি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গোপনীয় (Private document) তালিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর নির্বাচন সংক্রান্ত বিধিতে এটির কপি প্রদানের কোনো বিধান নেই। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভোটকেন্দ্রে এসে, প্রাথমিক তথ্যাদি প্রদান করে, ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে যে তালিকায় স্বাক্ষর করেছেন, সে তালিকাটি একটি অত্যন্ত গোপনীয় তালিকা। এটিও কোনো পাবলিক ডকুমেন্ট নয়।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সংরক্ষণের স্বার্থে এটি দেওয়া কর্তৃপক্ষ যথাযথ মনে করে না জানিয়ে বলা হয়েছে, অধিকন্তু দরখাস্ত বা আবেদনপত্রে উক্ত সই করা তালিকা কেন দরকার, কি কারণে প্রয়োজন, কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সে তালিকার দরকার হয়েছে- সেটিও সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। অতএব কতগুলো অস্পষ্ট, সারবত্তাহীন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এত গুরুত্বপূর্ণ তালিকার কপি প্রদানে কর্তৃপক্ষ সবিনয়ে অপারগতা প্রকাশ করছে।
তৃতীয় পয়েন্টে বলা হয়েছেম ব্যালট পেপার ছাপানোর প্রতিষ্ঠান বা ভেন্ডরদের পরিচয় সচেতনভাবে গোপন রাখা হয়েছে। এ গোপনীয়তা রক্ষা একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। এখানে নিশ্চিত করা যাচ্ছে যে, সব নিয়ম মেনে একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া বা দরপত্র আহবানের মাধ্যমে একটি পরীক্ষিত ও দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যালট পেপার ছাপানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ব্যালট পেপার ছাপানোর পরে নির্দিষ্ট পরিমাপে কার্টিং করে তা ওএমআর মেশিনে প্রি-স্ক্যানিংপূর্বক মেশিনের পাঠযোগ্যতা নিশ্চিত করে (machine readability) সিলগালাকৃত প্যাকেটে সরবরাহ করেন।
যে ওএমআর মেশিনে স্ক্যানিং করে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ সম্পন্ন করা হয়, তা নীলক্ষেতের কোন দোকানে সম্ভব নয় জানেয়ে বলা হয়েছে, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ করা হয়েছে, তাতে এটি অরক্ষিত থাকার সুযোগ নেই। এখানে উল্লেখ্য যে, ব্যালট পেপার মুদ্রণ একটি বিশেষায়িত প্রক্রিয়া। এর প্রতিটি পর্যায়ে নিবিড় তত্ত্বাবধান ও নির্বাচন কমিশনে কঠোর তদারকি ছিল। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যালট পেপার পাওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা বা কেন্দ্র প্রধান সিগনেচার করেন। পরে ভোটারদের তা সরবরাহ করা হয়।
এ ছাড়া নির্বাচনের আগে-পরে বা গণনার সময়ও সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট, পর্যবেক্ষক, সাংবাদিকসহ কেউই এ বিষয়ে কোন অভিযোগ উত্থাপন করেননি জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই ব্যালট বাক্স পরীক্ষা করা হয়েছে, খালি বাক্স নিশ্চিত করার পর তা সিলগালা করা হয়। তাছাড়া বণ্টিত ব্যালট পেপার ও প্রদত্ত ভোটের সংখ্যার কোন গড়মিল পরিলক্ষিত হয়নি।
আরও বলা হয়েছে, ভোটার কর্তৃক গৃহীত ব্যালট পেপার ও প্রদত্ত ভোটের মধ্যে অসামঞ্জস্য থাকলে বা কোনরকম অভিযোগ থাকলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতাম। এরকম কিছুই ঘটেনি। অতএব নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর ব্যালট পেপারের মুদ্রণ নিয়ে এহেন অভিযোগের কোন ভিত্তি আছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে না।
চতুর্থ পয়েন্টে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে সকল আবেদন, দরখাস্ত ও অভিযোগ পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। যথাসময়ে প্রত্যেককে জবাব ও সিদ্ধান্ত প্রেরণ করা হবে।