ঢাকা: প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তির লক্ষ্যে দরকষাকষিতে বাংলাদেশ দুর্বল। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে হলে দর কষাকষিতে বাংলাদেশের দক্ষতা আরো বাড়াতে হবে। বর্তমান বিশ্বে বাণিজ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই বিশ্বে অস্ত্রের পরিবর্তে বাণিজ্যকে ব্যবহার করা হচ্ছে। অতীতে ডলার ও পেট্রো ডলারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। আগামীতে এই প্রবণতা আরও বাড়বে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-মার্কিন ট্যারিফ চুক্তি: কীভাবে বাণিজ্য সুবিধা হতে পারে’ -শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএস-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস।
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমরা সংস্কার চাই। সবক্ষেত্রেই সংস্কার আনার চেষ্টা করছি। বাণিজ্য খাতে সংস্কার আনতে সমন্বিত অনলাইনে সেবা চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন এলডিসিতে যুক্ত হয়েছিল, তখন দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের চাইতে গরীব রাষ্ট্র ছিল। কিন্তু এখন দক্ষিণ কোরিয়া কোথায় পৌঁছেছে, আর আমরা বাংলাদেশ কোথায় অবস্থান করছি। এখন ইচ্ছে করলেই বেরোতে পারি না। এটি করতে হলে ৫১ শতাংশ সদস্য রাষ্ট্রের ভোট লাগবে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, মাত্র ছয় মাসের নোটিশে শুল্ক নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ সফল হয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের পণ্য কেনার সুযোগ কম। তবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চাই। সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন লাখেরও বেশি গম আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে আমাদের পণ্য রফতানি বাড়াতে হলে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে আমরা অন্যদেশে আমদানি ও রফতানির চিত্র বিশ্লেষণ করেছি। চীনের মতো দেশ থেকে আমরা আমদানি বেশি করি। কিন্তু রফতানি কম। তাই চুক্তির ক্ষেত্রে আমরা আমাদের দেশের রফতানিকে গুরুত্ব দিয়েছি।
সেমিনারে অন্যান্য বক্তারা বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ১ আগস্ট থেকে শুল্ক ২০ শতাংশে কমাতে সফল হয়েছে। পারস্পরিক শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে কমানোকে বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের পারস্পরিক শুল্ক হার তার এশিয়ান প্রতিযোগী যেমন ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার অনুরূপ এবং এটি মিয়ানমার ও ভারতের মতো কিছু প্রতিবেশীর তুলনায় অনেক কম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাজার বিশেষ করে পোশাক শিল্পের জন্য এই চুক্তি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হলে বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এই শুল্ক চুক্তির সুবিধা সর্বাধিক করার জন্য বাংলাদেশকে তার বাণিজ্য বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন দিক মোকাবেলা করে একটি বিস্তৃত কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
সেমিনারে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন বিআইআইএসএস গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অববিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) অধ্যাপক ড. গোলাম রসুল এবং বিজিএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইনামুল হক খান। সেখানে আরও বক্তব্য রাখেন বিআইআইএসএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ।