Wednesday 24 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গাজা যুদ্ধ শেষ করতে মুসলিম নেতাদের কাছে ট্রাম্পের শ্বেতপত্র পেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:৫৫ | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:১৪

ছবি সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম নেতাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে অধিকৃত পশ্চিম তীর দখল করতে দেবেন না। পলিটিকো নিউজের একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এই খবরটি ছয়টি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে, যারা এই আলোচনা সম্পর্কে অবগত। তাদের মধ্যে দুজন বলেছেন, ট্রাম্প এই বিষয়ে অনমনীয় ছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখল করতে দেওয়া হবে না।

পলিটিকো জানিয়েছে, ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি শ্বেতপত্র পেশ করেন, যেখানে যুদ্ধ-পরবর্তী শাসন ও নিরাপত্তা পরিকল্পনার পাশাপাশি পশ্চিম তীর দখল না করার প্রতিশ্রুতিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

বিজ্ঞাপন

ট্রাম্পের এই অঙ্গীকার অপ্রত্যাশিত মনে হতে পারে, কারণ অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেশিরভাগ অংশই কার্যত ইসরায়েল দখল করে রেখেছে এবং মার্কিন কর্মকর্তারা হয় তা মেনে নিয়েছেন বা এড়িয়ে গেছেন। এর আগে, মিডল ইস্ট আই-এর একটি প্রতিবেদনে একজন মার্কিন এবং একজন পশ্চিমা কর্মকর্তা জানান, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল জর্ডান উপত্যকা আনুষ্ঠানিকভাবে দখল করতে পারে। ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও অধিকৃত পশ্চিম তীরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকা নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করেছেন, যা ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে দখল করতে পারে।

অন্য একজন পশ্চিমা কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘ডিল অফ দ্য সেঞ্চুরিতে ইসরায়েলের দখলের জন্য যা কিছু ছিল, তার সবকিছুই এখন বিবেচনার মধ্যে আছে।’

ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবিও পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন। ২০১৭ সালে পলিটিকোকে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ইসরায়েলের কাছে জুডিয়া ও সামারিয়ার মালিকানা আছে। আমি কিছু শব্দ ব্যবহার করতে অস্বীকার করি। পশ্চিম তীর বলে কিছু নেই, এটি হলো জুডিয়া ও সামারিয়া। এখানে কোনো বসতি নেই, এগুলো সম্প্রদায়, পাড়া বা শহর। এখানে কোনো দখলদারিত্ব নেই।’

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান একমাত্র নেতা যিনি প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন। তিনি আলোচনাকে “ফলপ্রসূ” বলে বর্ণনা করেছেন, তবে বৈঠকের বিস্তারিত কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের বৈঠকের পাশাপাশি রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে ট্রাম্প এবং তুরস্ক, কাতার, সৌদি আরব, মিশর, পাকিস্তান, জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

লাল রেখা

গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল বারবার অধিকৃত পশ্চিম তীরকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করার হুমকি দিয়েছে। জাতিসংঘের শীর্ষ সম্মেলনের আগে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ায় ইসরায়েলের এই হুমকি আরও জোরালো হয়েছে।

যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ২১ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেন, ‘ইসরায়েল-বিরোধী পদক্ষেপের একমাত্র জবাব হলো জুডিয়া ও সামারিয়ায় ইহুদি জনগণের স্বদেশের ওপর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের নির্বোধ ধারণাটি চিরতরে বাতিল করা।’

জাতিসংঘের বৈঠকে ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা এবং মোনাকো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে, অন্যদিকে ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়াম কিছু শর্ত সাপেক্ষে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করার হুমকি সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবে উদ্বেগ তৈরি করেছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে সংযুক্ত আরব আমিরাত বলেছে, ইসরায়েলের এমন কোনো পদক্ষেপ তাদের জন্য একটি “লাল রেখা” হবে।

এই সতর্কবার্তা গুরুত্বপূর্ণ কারণ গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা সত্ত্বেও সংযুক্ত আরব আমিরাত কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে অন্যতম যারা ইসরায়েলের পাশে অবস্থান করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী লানা নুসেইবেহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য একটি লাল রেখা হবে। এটি আব্রাহাম চুক্তির মূল উদ্দেশ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’

সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরক্কো এবং বাহরাইন ২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তিতে সই করে। ফলে এই আরব দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এই পদক্ষেপের নিন্দা জানায় ফিলিস্তিনিরা এবং তাদের সমর্থকরা।

গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা অন্যান্য আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে, কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। উদাহরণস্বরূপ, এই বছরের শুরুর দিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন, যা গত ২২ মাসে কোনো আরব রাষ্ট্রে তার হাতে গোনা কয়েকটি জনসমক্ষে সফরের মধ্যে অন্যতম।

ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যম চ্যানেল ১২-এর ২২ সেপ্টেম্বরের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, সৌদি আরব ইসরায়েলকে বার্তা পাঠিয়েছে যে কোনো ধরনের দখলদারিত্বের ‘সব ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব’ থাকবে, যদিও এর বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক নীতির লক্ষ্য ছিল সৌদি আরবকে তথাকথিত আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করা, কিন্তু সৌদি আরব সেই চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন যেকোনো ধরনের স্বাভাবিকীকরণের জন্য একটি পূর্বশর্ত। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানও প্রকাশ্যে বলেছেন যে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ একটি গণহত্যা।

সারাবাংলা/এইচআই

গাঁজা গাজা যুদ্ধ মুসলিম নেতা শ্রেতপত্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর