Tuesday 30 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মিছিল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের, মামলায় আসামি বিএনপি নেতা!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:৩৬ | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২২:৩৫

১২ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মাহবুব আলম (সাদা বৃত্তে)। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিলের ঘটনায় পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় একজন বিএনপি নেতাকে আসামি করা হয়েছে। আর এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে তোলপাড়। তবে পুলিশের দাবি, ওই বিএনপি নেতা আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করছেন।

মামলার আসামি হওয়া ওই বিএনপি নেতার নাম মাহবুব আলম। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর ১২ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি। বর্তমানেও তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আজম খাজা।

বিজ্ঞাপন

গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ বেপারিপাড়া এক্সেস রোডে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে মিছিলে ধাওয়া দিয়ে ১১ জনকে গ্রেফতার করে। পরদিন ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ‘হঠাও ইউনুস বাঁচাও দেশ, শেখ হাসিনার নির্দেশ’ লেখা ব্যানার নিয়ে বের করা হয়েছিল ওই মিছিল। মিছিলে বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নাম উল্লেখ ছিল। তাদের হাতে ছিল বাঁশের লাঠি ও ইটের টুকরো। তারা মিছিলের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রসার, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা করেছিলেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

মামলার এজাহারে আসামির তালিকায় ৩৬ নম্বরে আছে মাহবুব আলমের (৫২) নাম। নগরীর ডবলমুরিং থানার দক্ষিণ পাহাড়তলী ঝর্ণাপাড়া এলাকায় তার ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলা দায়ের হওয়ার দু’দিন পর ২২ সেপ্টেম্বর মাহবুব আলমের সঙ্গে যোগাযোগ হয় সারাবাংলা’র। তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ওয়ার্ড বিএনপির পদেও ছিলাম। অথচ আমাকে আওয়ামী লীগের মিছিলের মামলায় আসামি করা হয়েছে। অথচ মিছিল যখন বের হয় আমি তখন মসজিদে নামাজ পড়ছিলাম।’

ওইদিন বিকেলে মাহবুব আলম সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, তাকে মামলায় আসামি করার বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানাতে নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আজম খাজাসহ কয়েকজন বিএনপি নেতা সিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে গেছেন।

জানতে চাইলে শওকত আজম খাজা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি সিএমপি কমিশনারের অফিসে যাইনি। তবে আমাদের সক্রিয় একজন নেতাকে ছাত্রলীগের মিছিলের একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

তবে ২২ সেপ্টেম্বরের পর থেকে মাহবুব আলমের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মোবাইল বন্ধ থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি।

সারাবাংলা’র কাছে আসা মাহবুব আলমের কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, তিনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। এছাড়া, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, জাতীয়তাবাদী পাটকল শ্রমিকদলের সভাপতি সাঈদ আল নোমানের সঙ্গে একাধিক কর্মসূচিতেও বক্তৃতা করছেন। ডবলমুরিং থানা পুলিশের ওপেন হাউজ ডে ও সিটিজেনস ফোরামের সভায়ও বক্তব্য দেওয়ার ছবি আছে তার।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি নেতা মাহবুব আলমকে ছাত্রলীগের মিছিলের মামলার আসামি করার বিষয়টি জানতে পেরে আমি ডবলমুরিং থানার ওসিকে ফোন করেছিলাম। বিষয়টি জানতে চেয়েছি ওসির কাছে। কীভাবে তার নাম এই মামলায় এল সেটা তদন্ত করে দেখতে বলেছি।’

জানতে চাইলে ডবলমুরিং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বাবুল আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘একসময় আওয়ামী লীগ করতেন, এখন মামলার আসামি হওয়ার পর শুনতে পাচ্ছি তিনি নাকি বিএনপি নেতা। যেদিন মামলা হয়েছে, সেদিন আমি ছুটিতে ছিলাম। উনার নাম কীভাবে মামলায় এল আমি জানি না, সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।’

বিএনপি নেতা মাহবুব আলম মিছিলে ছিলেন কি না? জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘মিছিলে ছিলেন কি না সেটা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। আর শুধু মিছিলে অংশ নিলেই মামলায় আসামি হবেন এমন তো নয়, এখানে আরও বিষয় আছে। তবে তদন্তে যদি সম্পৃক্ততা পাওয়া না যায়, তাহলে তিনি অব্যাহতি পাবেন।’

মাহবুব আলমের মোবইল বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি তার একটি কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সারাবাংলার কাছে এসেছে। এতে তাকে বলতে শোনা গেছে, তিনি সাইফুল আলম নামে একজনের ব্যবসায়িক পার্টনার। সাইফুল আওয়ামী লীগ সমর্থক। পাঁচ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়েছে। সাইফুলের ব্যবসায়িক পার্টনার হওয়ায় তিনিও (মাহবুব) আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ভেবে পুলিশ তার নাম মামলায় ঢুকিয়ে দিয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

আসামি টপ নিউজ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বিএনপি নেতা মিছিল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর