ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, তফসিলি বিশেষায়িত ব্যাংক, অ-তফসিলি বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত কর্মচারীদের উৎসাহ বোনাস প্রদানে নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে সরকার। নির্দেশনা অনুযায়ী, নির্ধারিত ৫টি মূল সূচকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পারফরম্যান্স মূল্যায়নে উৎসাহ বোনাস প্রদান করা হবে এবং উৎসাহ বোনাস প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব বছরের শেষ মাসে প্রাপ্য মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ উৎসাহ বোনাসের ভিত্তি হিসেবে গণ্য হবে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বিদ্যমান উৎসাহ বোনাস প্রদান নির্দেশিকা ‘যুগোপযোগী করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয় প্রতীয়মান হওয়ায়’ নতুন এ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, তফসিলি বিশেষায়িত ব্যাংক, অ-তফসিলি বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে উৎসাহ বোনাস প্রদানে বিবেচ্য সূচকগুলো প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে পরিমাপ করবে- সে নমুনা ছকও প্রজ্ঞাপনে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, উৎসাহ বোনাস প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারের উদ্দেশ্য এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের প্রকৃতি বিবেচনায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রুপভিত্তিক মূল্যায়ন সূচক ও ভার নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ও তফসিলি বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য অভিন্ন পাঁচটি সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ১) ওয়ার্কিং ফান্ডের ওপর নিট মুনাফার হার; ২) আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধির হার; ৩) ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ বৃদ্ধির হার; ৪) শ্রেণিকৃত ঋণ থেকে নগদ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে আদায়ের হার এবং ৫) অবলোপনকৃত ঋণ থেকে নগদ আদায়ের হার।
অ-তফসিলি বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য ‘আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধির হার’ (২ নং) সূচকটি বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকি চারটি যথারীতি থাকছে।
বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)-এর জন্য তিনটি মূল্যায়ন সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ১) ওয়ার্কিং ফান্ডের ওপর নিট মুনাফার হার; ২) আদায়যোগ্য ঋণের মধ্যে বাৎসরিক প্রকৃত ঋণ আদায় হার এবং ৩) ঋণ ও বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধির হার।
ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর জন্য ৫টি মূল্যায়ন সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ১) ওয়ার্কিং ফান্ডের ওপর নিট মুনাফার হার; ২) বিনিয়োগের বিপরীতে লভ্যাংশ ও মূলধনী মুনাফা অর্জনের হার; ৩) শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের হার; ৪) পুঁজিবাজারে আইসিবি’র লেনদেন বৃদ্ধির হার; এবং ৫) অবলোপনকৃত ঋণ থেকে নগদ আদায়ের হার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সূচকগুলোর পারফরম্যান্স মূল্যায়নে মোট ৪০ নম্বরের কম হলে কোনো উৎসাহ বোনাস দেওয়া হবে না। কোনো ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবলোপনকৃত ঋণ না থাকলে এ সূচকে শূন্য নম্বর পাবে, তবে এ সূচক ছাড়া অন্যান্য সূচকে প্রাপ্ত নম্বর ১০০ নম্বরে রূপান্তর করে মোট প্রাপ্ত নম্বর নির্ধারণ করা হবে। মোট প্রাপ্ত নম্বর ৪০-৪৯ হলে ১টি, ৫০-৫৯ হলে ১.৫টি, ৬০-৬৯ হলে ২টি, ৭০-৭৯ হলে ২.৫টি এবং ৮০ বা এর ঊর্ধ্বে হলে সর্বোচ্চ ৩টি উৎসাহ বোনাস দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব বছরের শেষ মাসে প্রাপ্য মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ উৎসাহ বোনাসের ভিত্তি হিসেবে গণ্য হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নির্দেশনার আলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে উৎসাহ বোনাস প্রদান করবে। তবে বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশের ভিত্তিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমোদনক্রমে উৎসাহ বোনাস প্রদান করতে হবে। কোনো তফসিলি ব্যাংক আমানত গ্রহণ কার্যক্রম শুরু না করা পর্যন্ত অ-তফসিলি বিশেষায়িত ব্যাংক ক্যাটাগরিতে উৎসাহ বোনাস প্রাপ্য হবে।
কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো বছরে উৎসাহ বোনাস প্রাপ্য না হলে বিবেচ্য বছরে ওই প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কোনো অর্জন বিবেচনায় উৎসাহ বোনাস প্রদানের আবেদন করলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবে।
প্রজ্ঞাপন বলা হয়েছে, বিবেচ্য বছরের চাকরিকাল অনুযায়ী কর্মচারীরা আনুপাতিক হারে উৎসাহ বোনাস প্রাপ্য হবেন। তবে নতুন যোগদানের ক্ষেত্রে চাকরির বয়স সংশ্লিষ্ট বছরে কমপক্ষে ৬ মাস হতে হবে। পিআরএল ভোগরত/চূড়ান্ত অবসর গ্রহণকৃত/পদত্যাগকৃত কর্মচারীরাও বিবেচ্য বছরের চাকরিকাল ও প্রাপ্যতা অনুযায়ী আনুপাতিক হারে এ সুবিধা পাবেন। চাকরিচ্যুত বা সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃতদেরও বরখাস্ত হওয়ার পূর্ববর্তী দিন শেষ কর্মদিবস বিবেচনা করে প্রাপ্যতা অনুযায়ী এ সুবিধা দেওয়া যাবে।