Thursday 25 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিলেটের ৬ পর্যটনকেন্দ্র উন্নয়নে সরকারের মহাপরিকল্পনা

ডিস্ট্রিক্ট করসপন্ডেন্ট
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:৪১

সাদাপাথর ও জাফলং পর্যটন স্পট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন মাস্টারপ্ল্যান কমিটি

সিলেট: দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্পট সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুলসহ ছয়টি পর্যটনকেন্দ্রকে ঘিরে ‘সিলেট পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান কমিটি’ নামের প্রকল্প গঠন করে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. বজলুর রশিদকে কমিটির সভাপতি করে গঠিত এ কমিটিতে পরিবেশ, বিজ্ঞান, স্থাপত্য, নগর পরিকল্পনা, পর্যটন ব্যবস্থাপনা এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কমিটির বিশেষজ্ঞরা সাদাপাথর পরিদর্শন করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সিলেট পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে সিলেটের সাদাপাথর ও জাফলং পর্যটন স্পট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

বিজ্ঞাপন

পরিদর্শনে তারা সাদাপাথর, জাফলং ও আশপাশের অঞ্চল ঘুরে দেখেন এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলোর বর্তমান অবস্থা, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রাসহ মাঠপর্যায়ে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।

পর্যটন শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা ও স্থানীয় অর্থনীতিতে গতি আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার সিলেটের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন নিয়ে মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে একটি ট্যুরিস্ট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে নেদারল্যান্ডস সরকার অর্থায়ন করবে।’

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা স্টাডি করতে প্রাথমিকভাবে এখানে এসেছি এবং মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে সিলেটের ৬টি পর্যটন কেন্দ্রকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের নামকরা স্থপতি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এখানে পরিদর্শন করতে এসেছি। সরকারের পর্যটন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটা হবে এলাকার জনগণের জন্য অত্যন্ত আনন্দের খবর।কারণ এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। পর্যটন শিল্প থেকে তাদের আয় রোজগার বেড়ে যাবে। এবং সাদাপাথরকে ইকো-ট্যুরিজম হিসেবে সংরক্ষিত করা হবে।’

পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পর্যটন প্রকল্প কমিটির সদস্যরা বলেন, ‘সরকার একটি দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। যাতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষিত থাকে, স্থানীয়রা উপকৃত হন এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকরা উন্নত অভিজ্ঞতা পান। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পর্যটনকেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন, পর্যটকদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ এবং স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই এ মহাপরিকল্পনার মূল লক্ষ্য।’

তারা আরও জানান, পরিকল্পনায় জলাভূমি, নদী, পাহাড় ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, পর্যটকদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যেমন উন্নত সড়ক যোগাযোগ, পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সেবা, পরিচ্ছন্নতা এবং তথ্যসেবা কেন্দ্র গড়ে তোলার সুস্পষ্ট রূপরেখা থাকবে।

বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো তৈরি এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে উপস্থাপন করার ব্যবস্থা থাকবে। একইসঙ্গে ‘ইকো-ট্যুরিজম’ এবং ‘কমিউনিটি- বেইজড ট্যুরিজম’ মডেলের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হবে, যাতে স্থানীয় বাসিন্দারা সরাসরি উপকৃত হন।’

পরিদর্শনকালে স্থানীয় ব্যবসায়ী, পরিবহনকর্মী, গাইড এবং সাধারণ বাসিন্দারা এই মহাপরিকল্পনাকে স্বাগত জানান। তাদের মতে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে পর্যটন মৌসুমে স্থানীয় অর্থনীতি অনেক বেশি চাঙা হবে এবং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি হবে। তাদের প্রত্যাশা, এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সিলেট হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন গন্তব্য।

সিলেটের সাদাপাথর হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের মালিক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলকাছ আলী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন থেকে উন্নত পর্যটন ব্যবস্থার অপেক্ষায় ছিলাম। এখানে আমরা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি শুধুমাত্র পর্যটন শিল্প ও এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে। যদি পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে এখানকার হাজার হাজার মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আসবে। এবং পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগে দেশ বিদেশের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসবে।’

পরিদর্শনে ‘সিলেট পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান কমিটি’ সভাপতি ড. বজলুর রশিদ ছাড়াও অন্যান্য প্রতিনিধি দলের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন–স্থপতি ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমেদ, পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক (বুয়েট) এ কে এম সাইফুল ইসলাম, বিশিষ্ট বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান, স্থপতি ও প্রফেসর রফিক আজম, ভলিউম জিরো লিমিটেড প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ, আর্কিটেক (বাংলাদেশ আইএবি) আসিফ ইমরান খান রাফসান ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিন মিয়া প্রমুখ।

সারাবাংলা/এইচআই

মহাপরিকল্পনা সাদাপাথর সিলেট

বিজ্ঞাপন

‘ইউনূস সাহেব বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন’
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:৩১

আরো

সম্পর্কিত খবর