জনপ্রিয় ভারতীয় সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ আমির খান অভিনীত ‘র্যাঞ্চো’ চরিত্রটির অনুপ্রেরণা সোনম ওয়াংচুককে লাদাখে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনতাকে সহিংসতায় প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তাকে কঠোর জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ)-এর আওতায় আটক করা হয়েছে। এই আইনে দীর্ঘমেয়াদে বিচার ছাড়াই বন্দি রাখার সুযোগ রয়েছে।
ওয়াংচুক সম্প্রতি প্রকাশ্যে বলেন, ‘লাদাখের রাজ্যের দাবির আন্দোলনের জন্য যেকোনো সময় গ্রেফতার হতে রাজি।’ একথা বলার ঠিক একদিন পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক সংস্থা (এনজিও) ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অব লাদাখ’ (এসইসিএমওএল)-এর বিদেশি অনুদান গ্রহণের অনুমতি বাতিল করে। অভিযোগ ছিল, সংস্থাটি বিদেশি তহবিল নিয়েছে। তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওয়াংচুক দাবি করেন, তাদের বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা যেমন-জাতিসংঘ, সুইস ও ইতালীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কেবল ব্যবসায়িক লেনদেন হয়েছে, কিন্তু সেটি বিদেশি অনুদান নয় এবং সমস্ত কর পরিশোধ করা হয়েছে।
লাদাখে গত দুই দিন আগে সহিংসতায় অন্তত চারজন নিহত ও ৫০ জনের বেশি আহত হন, যাদের মধ্যে নিরাপত্তারক্ষীও রয়েছেন। এই ঘটনার পর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রশাসন ওয়াংচুককে দায়ী করছে। সরকারের দাবি, তিনি অনশনের সময় মানুষকে উসকে দিয়েছিলেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুরুতর কোনো পদক্ষেপ নেননি।
উল্লেখ্য, লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া ও ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় স্বশাসিত কাঠামো গঠনের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই তুলছেন ওয়াংচুক ও তার সহযোগীরা। ২০১৯ সালে কেন্দ্র জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (অনুচ্ছেদ ৩৭০) বাতিল করার পর লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করলে শুরুতে আনন্দ প্রকাশ করলেও ধীরে ধীরে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। রাজনৈতিক শূন্যতা ও প্রশাসনিক সংকটের কারণে বৌদ্ধপ্রধান লেহ এবং মুসলিমপ্রধান কারগিলের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনগুলো যৌথভাবে আন্দোলনে নামে।
এই গ্রেফতারের সমালোচনা করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং কংগ্রেস নেতা গুলাম আহমেদ মির। তাদের মতে, শান্তিপ্রিয় আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে বিজেপি সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে।