চট্টগ্রাম ব্যুরো: ইশতেহার তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলগুলো। সবার একটাই কথা, শিক্ষার্থীদের মন জয়। তাদের চাওয়া ও ভাবনাগুলো যেন ইশতেহারে উঠে আসে- সেটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন প্রার্থীরা।
দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি চলছে। ছুটির ফাঁকেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলগুলোর প্রার্থীরা তাদের ইশতেহার প্রণয়নের কাজ সেরে নিচ্ছেন। ছুটি শেষেই যেন প্যানেলগুলো ইশতেহার ঘোষণার মাধ্যমে জোরালো প্রচার শুরু করতে পারেন- এমন লক্ষ্যই তাদের।
চাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের ২৬টি পদের বিপরীতে নির্বাচন করবেন ৪১৫ জন। আর ১৫টি হল ও একটি হোস্টেল সংসদের বিভিন্ন পদে ৪৯৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
চাকসুর ভিপি পদে ২৪ জন, জিএস পদে ২২ এবং এজিএস পদে ২১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নির্বাচনে ছাত্রদল স্বনামে, ইসলামী ছাত্রশিবির ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ নামে এবং ‘দ্রোহ পর্ষদ’ নামে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট প্যানেল ঘোষণা করেছে।
এছাড়া, ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সম্মিলিত ভাবে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্যসহ’ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সব মিলিয়ে ১২টি প্যানেল ঘোষণা করেছে।
এর মধ্যে ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের মতামতের আলোকে ইশতেহার প্রণয়ন করছে বলে জানান সংগঠনটির প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়। জানতে চাইলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের ভাবনার আলোকে ইশতেহার তৈরি করছি। তাদের ভাবনাই আমাদের ইশতেহার। আমাদের ইশতেহারের সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে- শতভাগ আবাসন নিশ্চিত ও তা না হওয়া পর্যন্ত আবাসন ভাতা চালু, পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, হল ও ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়ন, নিরাপদ ক্যাম্পাস, আধুনিক চিকিৎসা সেবা এবং গবেষণায় বাজেট বৃদ্ধি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান আবাসন সংকট নিরসনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যাতায়াত দুর্ভোগ কমাতে শাটলে নতুন বগি সংযোজন ও বাস সার্ভিস চালুর ব্যাপারে কাজ করব। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান উন্নয়ন এবং নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখব। সেইসঙ্গে গবেষণা খাতে যেন বেশি বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটার জন্য আমরা কাজ করব।’
একইভাবে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলও ইশতেহার তৈরিতে শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান প্যানেলটির ভিপি পদপ্রার্থী ইব্রাহিম রনি। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণের দিক সামনে রেখে আমাদের ইশতেহার সাজানো হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করছি। তাদের দাবি দাওয়ার বিষয়গুলো আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি। আমাদের ইশতেহারে- নিরাপদ ক্যাম্পাস, শতভাগ আবাসন, যাতায়াত ও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, উন্নত চিকিৎসা সেবা এবং টিএসসি (টিচার্স-স্টুডেন্টস সেন্টার) নির্মাণসহ এই পাঁচটি বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবাসন সংকট বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রচুর শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাহিরে অবস্থান করে। আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন হল নির্মাণ ও পুরনো হল সংস্কার করে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আবাসনের আওতায় আনার চেষ্টা করব। এছাড়া, শাটল ট্রেনে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। পরিবহণ সমস্যা সমাধান, মেডিকেল সেন্টারে আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করা এবং ছাত্র-শিক্ষকদের মেলবন্ধন তৈরির জন্য টিএসসি নির্মাণের বিষয়গুলো আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখব।’
অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সমন্বয়ে গঠিত দ্রোহ পর্ষদ ইশতেহার প্রণয়নের কাজ করছে বলে জানান প্যানেলটির ভিপি পদপ্রার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ। তাদের ইশতেহার নিয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ইশতেহার এখনো তৈরি হয়নি। কাজ শুরু করেছি। তবে আমাদের ইশতেহারে নিরাপদ ক্যাম্পাস, নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি প্রতিরোধ, শতভাগ আবাসন নিশ্চিতকরণ এবং শাটল ট্রেন সমস্যার সমাধানকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেব।’
প্রসঙ্গত, প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগস্ট চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। আগামী ১৫ অক্টোবর চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে, ১৯৭০ সালে চাকসুর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১ সালে এবং ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়।