Sunday 28 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেখ হাসিনার মামলায় শেষ সাক্ষীর জবানবন্দি, দেখানো হলো ১৭ ভিডিও

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:১৯

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা: জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের সাক্ষ্যগ্রহণ প্রথম দিনের মতো শেষ হয়েছে। ৫৪তম বা শেষ সাক্ষী হিসেবে তার বাকি জবানবন্দি নেওয়া হবে আগামীকাল সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর)।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন। অপর সদস্য হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

এদিন দুপুর সোয়া ১২টার পর সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর। এরপর শপথ পড়ে পরিচয় দিয়ে নিজের জব্দকৃত ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন তিনি। পরে সেসব ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।

ভিডিওতে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ভয়ংকর বা নৃশংস দৃশ্য ফুটে উঠেছে। প্রথমেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়। একপর্যায়ে একে একে সব দেখানো হয়। এর মধ্যে গত বছরের ১৪ জুলাই আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি আখ্যায়িত করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের চিত্রও তুলে ধরা হয়।

এছাড়া রংপুর-রাজধানীর চানখারপুলে চালানো পুলিশের পাশবিকতার ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এমনকি আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর সেই হৃদয়বিদারক ঘটনাটিও ফুটে ওঠে। সবশেষ গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের চালানো হত্যাযজ্ঞ নিয়ে বানানো একটি প্রামান্য চিত্র দেখানো হয়। আর এসব ভিডিও প্রদর্শনী বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, তানভীর হাসান জোহাসহ অন্যরা।

এর আগে, ২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওই দিন সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। পরে তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

তদন্তকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬৯টি অডিও ক্লিপ ও তিনটি মোবাইল নম্বরের সিডিআর বা কল ডিটেইল রেকর্ড জব্দ করেন তানভীর জোহা। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তিনি পাঁচটি অডিও কথোপকথন সম্বলিত তিনটি সিডি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। পরে সেসব ফোনালাপ শোনানো হয়।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন তিনজন। তাদের দুজনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার রেকর্ড ও লাইব্রেরি ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ২২ সেপ্টেম্বর ৪৯তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন শহিদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী। এর মধ্য দিয়ে ঘটনার সাক্ষ্য সম্পন্ন করেন প্রসিকিউশন। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলেই শুরু হবে যুক্তিতর্ক। এরপর রায়ের পালা।

এদিকে, শেখ হাসিনার এ মামলায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আজও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তার সামনেই জবানবন্দি দেন সাক্ষীরা।

সাক্ষীদের জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বীভৎস বর্ণনা উঠে এসেছে। আর এসবের জন্য দায়ী করে শেখ হাসিনা, কামালসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন শহিদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহিদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।

সারাবাংলা/আরএম/এনজে

জবানবন্দি শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর