Sunday 28 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আকার অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ
ইলিশের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ চার স্তরে হাতবদল ও উচ্চ ফ্লোর প্রাইস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:০৪ | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:৫৩

-ছবি : ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন

ঢাকা: জেলে থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে চার থেকে ছয় স্তরে হাত বদল এবং মাছঘাটে দাদন ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত উচ্চ মূল্যের ফ্লোর প্রাইসের কারণে ইলিশ মাছের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এর মধ্যে গত চার মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যবধানে ইলিশের দাম বেড়েছে ৫০ ভাগ। আর এই দাম বাড়ার চক্রে জেলেরা প্রাথমিক পর্যায়ে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়, অন্যদিকে ভোক্তাদের চূড়ান্তভাবে এর ভার বহন করতে হয়। এ প্রেক্ষিতে ফ্লোর প্রাইস নিরুৎসাহিত করতে ইলিশের আকার অনুযায়ী সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ; মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য রোধে জেলেদের সমবায় সমিতি গঠন, ইলিশের তথ্য সম্বলিত একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি ও ন্যায্যমূল্যে ইলিশের ক্রয় নিশ্চিত করতে ইলিশ উৎপাদন মৌসুমে দেশের প্রধান শহরগুলোতে সরকারি উদ্যোগে ইলিশের বিশেষ বিপণন কেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশ করেছে ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন’ (বিটিটিসি)।

বিজ্ঞাপন

অতি সম্প্রতি ট্যারিফ কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইলিশ মাছের বাজারমূল্য সংক্রান্ত সমীক্ষা প্রতিবেদন’-এ এসব কথা বলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এ প্রতিবেদনের অনুলিপি বাণিজ্য সচিব এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।

ট্যারিফ কমিশন জানায়, সমীক্ষা প্রতিবেদনে ছয়টি বিষয় পর্যালোচনা করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ; ইলিশ মাছ আহরণ থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত সাপ্লাই চেইন; আহরণ পর্যায়ে প্রতি কেজি ইলিশের ব্যয়; আহরণ পরবর্তী সংরক্ষণ পদ্ধতি; সরকারের নীতি সহায়তা এবং রফতানি সম্ভাবনা ও রফতানি মূল্য।

প্রতিবেদনে ইলিশের দাম বাড়ার ১১টি কারণ চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, জেলে থেকে মাছঘাট-আড়তদার-হোলসেল পাইকার-খুচরা বিক্রেতা/দোকানদার এসব স্তর পেরিয়ে ইলিশ ভোক্তার হাতে পৌঁছে। প্রতিটি স্তরে দাম বাড়ে প্রায় ৬০ ভাগ। অন্যদিকে দাদন ব্যবসায়ীরা মাছঘাটে চড়া দামের যে ‘ফ্লোর প্রাইস’ নির্ধারণ করে দেয়, সেটাই হয়ে দাঁড়ায় ইলিশের সর্বনিম্ন মূল্য। এর কমে মাছ বিক্রি করা যায় না। এগুলো হচ্ছে ইলিশের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম ক্ষেত্র।

ইলিশ আহরণের তুলনায় স্থানীয় বাজারে বিক্রয়মূল্য অনেক বেশি- উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন কী ইলিশের রফতানি মূল্য স্থানীয় বাজার মূল্যের অর্ধেক। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীয়া অস্বাভাবিক হারে মুনাফা করছে বলে প্রতীয়মান হয়। তবে বিগত সময়ের তুলনায় গত জুলাই পর্যন্ত সময়ে নদীতে ইলিশের সরবরাহ দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জুনে প্রতি কেজি ইলিশের দাম ছিল ৬০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকা। আগস্টে সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে দাম কিছুটা কমে হয় ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। অন্যদিকে সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে ৯০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় উন্নীত হয়।

অন্যদিকে প্রতিবছর গড়ে সাড়ে পাঁচ লাখ টনের মতো ইলিশ আহরিত হয়। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৫ লাখ ২৯ হাজার টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম ৫৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়েছে।

ইলিশের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার ১১টি কারণের মধ্যে রয়েছে- চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা, মজুত ও সিন্ডিকেট, জ্বালানি তেল ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, মাছ ধরার খরচ বৃদ্ধি, নদীর নাব্যতা সংকট ও পরিবেশগত সমস্যা, অবৈধ জালের ব্যবহার, দাদন, বিকল্প কর্মসংস্থান, নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও রফতানির চাপ।

সারাবাংলা/আরএস

ইলিশের দাম বাড়ার কারণ ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন

বিজ্ঞাপন

অমর একুশে বইমেলা স্থগিত
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:৫১

আরো

সম্পর্কিত খবর