ঢাকা: নানা কারণে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে দিন দিন বেড়েই চলেছে বায়ুদূষণ। ধোঁয়া, যানজট, শিল্পকারখানার নিঃসরণ, নির্মাণকাজের ধুলোবালি এবং অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণের কারণে মানুষকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে দূষিত বায়ু। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহরের তালিকায় অবস্থান করছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করা গেলেও শহরের বাতাস এখনো সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর রয়ে গেছে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান নির্ণায়ক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ১১২ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে ঢাকা। এ স্কোর সংবেদনশীল গোষ্ঠী যেমন শিশু, প্রবীণ ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিশ্বে কোন কোন শহর এগিয়ে
একই সময়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। শহরটির একিউআই (AQI) স্কোর দাঁড়িয়েছে ১৮৫, যা “অস্বাস্থ্যকর” ক্যাটাগরিতে পড়ে।
দ্বিতীয় স্থানে উগান্ডার রাজধানী কামপালা (১৫৩ স্কোর)। সমান স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। চতুর্থ অবস্থানে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা (১৫০ স্কোর)। আর ভারতের রাজধানী দিল্লি রয়েছে পঞ্চম স্থানে, যার একিউআই স্কোর ১৩৯।
ঢাকা সপ্তম স্থানে থাকলেও এ শহরের অবস্থা মাঝেমধ্যে আরও খারাপ হয়। বিশেষ করে শীতকালে ধোঁয়াশা এবং নির্মাণকাজের কারণে একিউআই প্রায়ই ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রায় উঠে যায়।
একিউআই স্কোরের মানদণ্ড
বায়ুমানের সূচক একিউআই (Air Quality Index) শূন্য থেকে ৫০ হলে তা ভালো ধরা হয়।
৫১ থেকে ১০০ এর মধ্যে হলে তা মাঝারি মাত্রার দূষণ।
১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর।’
১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত হলে তা সবার জন্যই ‘অস্বাস্থ্যকর।’
২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং
৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে হলে তা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে শিশু, প্রবীণ এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্তদের বাইরে যাওয়া কমাতে হবে। আর সাধারণ মানুষের জন্যও বাইরে শারীরিক কর্মকাণ্ড সীমিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ঢাকার জন্য সতর্কবার্তা
ঢাকায় বায়ুদূষণের পেছনে মূল কারণ হিসেবে দেখা হয়—
-অতিরিক্ত যানবাহন
-ইটভাটা ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া
-অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজ
-বর্জ্য পোড়ানো এবং
-সবুজ জায়গার অভাবকে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, সরকার ও নগর কর্তৃপক্ষ যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে ভবিষ্যতে ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হতে বেশি সময় লাগবে না।
নাগরিকদের করণীয়
বায়ুদূষণ থেকে সুরক্ষার জন্য চিকিৎসকরা বিশেষত সংবেদনশীল গোষ্ঠীকে কয়েকটি পরামর্শ দিচ্ছেন—
-বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা
-সকালে ও রাতে ব্যায়াম কম করা
-বেশি সময় বাইরে না থাকা
-ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ রাখা এবং
-ফিল্টারযুক্ত পানীয় জল গ্রহণ করা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারী নীতিমালার পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ঢাকাকে দূষণমুক্ত করা সম্ভব নয়।