Monday 29 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গবেষণা
অপ্রাপ্ত বয়সে ৬৫% পোশাক শ্রমিকের গর্ভধারণ, বিয়ে ৬৯%

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:৫০ | আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:১১

পোশাক শ্রমিক। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: শহুরে বস্তিতে বসবাসকারী নারী পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে ৬৯ ভাগের বিয়ে ১৮ বছর হওয়ার আগে এবং তাদের মধ্যে ৬৫ ভাগ অপ্রাপ্ত বয়সেই গর্ভধারণ করছেন। এছাড়াও, প্রায় প্রতি তিনজনে একজন নারীশ্রমিক জীবনে অন্তত একবার অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শিকার হয়েছেন এবং প্রতি চারজনে একজন গর্ভপাত বা মেনস্ট্রুয়াল রেগুলেশনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআর,বি এর সাসাকাওয়া মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের শহুরে বস্তিতে বসবাসকারী নারী পোশাক শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়।

গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহায়তায় অ্যাডসার্চ বাই আইসিডিডিআর,বি প্রায় দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে করা এই গবেষণায় শহুরে বস্তিতে বসবাসকারী ১৫–২৭ বছর বয়সী মোট ৭৭৮ জন বিবাহিত নারী পোশাক শ্রমিকদের পর্যবেক্ষণ করা হয়। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণাটি কড়াইল ও মিরপুর বস্তি এবং গাজীপুরের টঙ্গী বস্তিতে আইসিডিডিআরবির আর্বান হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভেইলেন্সের আওতাধীন এলাকায় পরিচালিত হয়। গবেষণাটি বাল্যবিবাহ, কিশোরী গর্ভাবস্থা, পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতনতা এবং কর্মক্ষেত্র ও গৃহে সহিংসতার ব্যাপকতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নতুন তথ্য তুলে ধরেছে। একইসঙ্গে, দাম্পত্য সহিংসতা থেকে সুরক্ষায় নারী ক্ষমতায়নের ভূমিকাও এতে খতিয়ে দেখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

 

নারী পোশাক শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথিরা। ছবি: সারাবাংলা

নারী পোশাক শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথিরা। ছবি: সারাবাংলা

 

সেমিনারে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে জানানো হয়, গবেষণার শুরুতে ৪৯ শতাংশ নারী তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা ছিল, যা দুই বছর শেষে ফলো আপ করার করার সময় দেখা যায় ৭০ শতাংশে। জরুরি গর্ভনিরোধক বড়ি বা ট্যাবলেট সম্পর্কে জ্ঞানও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। শুরুতে ১৫ শতাংশ নারী এ সম্পর্কে জানতেন, যা পরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩৯ শতাংশে। একই সময়ে পরিবার পরিকল্পনায় লিঙ্গ সমতার অর্থাৎ, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মতামতের প্রাধান্য দেওয়ার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ শতাংশে।

গবেষণায় দেখা যায়, নারী শ্রমিকরা ঘর ও কর্মস্থল দুই জায়গাতেই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। গত ১২ মাসে স্বামীর সহিংসতার হার ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যৌন সহিংসতা ছাড়া অন্য সব ধরনের সহিংসতা গত দুই বছরে বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রেও সহিংসতার প্রবণতা উলটোদিকে গেছে— গবেষণার শুরুতে যেখানে প্রায় ৪৮ শতাংশ শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে মানসিক সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন, গবেষণার শেষ দিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশে। তবে সহিংসতার শিকার হওয়ার পরও খুব কম সংখ্যক নারী আনুষ্ঠানিকভাবে সাহায্য চাইছেন। গবেষণার শুরুতে যেখানে ৩৫ শতাংশ নারী অনানুষ্ঠানিকভাবে সাহায্য চাইতেন, গবেষণার শেষ দিকে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২১ শতাংশে।

তরুণ বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি কমাতে কিছু নিয়ামকও চিহ্নিত হয়েছে গবেষণায়। দেখা গেছে, যারা সন্তান ধারণের আগেই গর্ভনিরোধক ব্যবহার শুরু করেছিলেন, তাদের কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের ঝুঁকি ৪৭ শতাংশ কম। এছাড়া যারা প্রথম গর্ভধারণের আগে গার্মেন্টস খাতে কাজ শুরু করেছিলেন, তাদের ঝুঁকি আরও কম। অন্যদিকে, স্বামী কর্তৃক সহিংসতার অভিজ্ঞতা থাকলে কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেড়ে যায় বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।

এই গবেষণার প্রধান গবেষক আইসিডিডিআরবির ইমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. রুচিরা তাবাসসুম নভেদ বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে তুলনামূলক এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অবস্থা অন্য নারীদের চেয়েও খারাপ। পরিস্থিতি উন্নয়নের নিয়ামকগুলো নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা দরকার। এজন্য সরকার, উন্নয়ন সংস্থা ও অংশীদারদের সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।

এসময় অতিথি হিসেবে বিকেএমইএর যুগ্ম সচিব ফারজানা শারমিন বলেন, গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শমূলক সেবা বৃদ্ধির কাজ চলছে। তবে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। যেহেতু সমাজ ব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক, তাই নারীদের জন্য ‘ওয়ার্ক লাইফ ব্যালান্স’ ধরে রাখা বেশ কঠিন। গর্ভধারণের মতো বিষয়েও তাদের মতামতের তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য।

মেরি স্টোপেস বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও স্বাধীন গবেষক ইয়াসমিন এইচ আহমেদ বলেন, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নারীরা এখনো দোকানে গিয়ে স্বল্পমেয়াদী জন্মবিরতিকরণ সামগ্রী ক্রয় করতে পারে না। তাই গার্মেন্টসগুলোতে কাউন্সেলিং এর পাশাপাশি সাধারণ জন্মবিরতিকরণ সামগ্রীগুলো নিশ্চিত করতে হবে।

সেমিনারে পপুলেশন কাউন্সিল বাংলাদেশের সাবেক পরিচালক ড.উবাইদুর রব বলেন, নারীদের কর্মক্ষেত্র এখন কেবল গার্মেন্টসই সীমাবদ্ধ নেই। তবে যেখানেই কাজ করুক না কেন অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ কমাতে হবে। এজন্য কর্মীদের জ্ঞান বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

সারাবাংলা/এমএইচ/এসএস

অপ্রাপ্ত গর্ভধারণ পোশাক বয়স বিয়ে শ্রমিক

বিজ্ঞাপন

সোনার বারসহ পাচারকারী নারী আটক
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:৫৪

আরো

সম্পর্কিত খবর