Thursday 16 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অবৈধ অভিবাসীদের ডাটাবেজ তৈরি করবে ডিএমপি


৯ জুলাই ২০১৮ ০৮:৩৫ | আপডেট: ৯ জুলাই ২০১৮ ০৮:৪০

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: অপরাধীদের সহজে শনাক্ত করতে ভাড়াটিয়ার তথ্য সম্বলিত ডাটাবেজের আদলে বাংলাদেশে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের পৃথক একটি ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত সুপারিশের একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে সংস্থাটি।

ওই চিঠিতে যেসব বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে আঙুলের ছাপ রেখে একটি ডাটাবেজ তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেন তাদের সহজেই শনাক্ত করা যায়।
ডিএমপি’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলা’কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ডিএমপির ওই কর্মকর্তা বলেন, দেশে প্রবেশের পর বিদেশি অভিবাসীদের থেকে যাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। অবৈধভাবে বসবাসকারী বেশিরভাগ বিদেশিরই কোনও পাসপোর্ট বা বৈধ কাজের অনুমোদন (ওয়ার্ক পারমিট) নেই। এই বিদেশিদের অনেকেই জাল মুদ্রা তৈরি, চোরাচালান, মাদক ব্যবসা, সাইবার অপরাধ এবং দেশে বিভিন্ন প্রতারণামূলক কার্যক্রমে জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ডিএমপির অপরাধ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে বিদেশিদের বিরুদ্ধে ৯৬টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব বিদেশি নাগরিকের বেশিরভাগই আফ্রিকান, যারা ফুটবল খেলোয়াড় পরিচয়ে দেশে এসেছে।

ডিএমপির ওই কর্মকর্তা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠানো সুপারিশের ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, একজন বিদেশি ফুটবলার নিয়োগের আগে বাংলাদেশের স্থানীয় ক্লাব যেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমতি নেয়। স্থানীয় ফুটবল ক্লাবের জন্য বিদেশি ফুটবলারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ এবং বিশেষ শাখাকে অবিলম্বে অবহিতকরণও বাধ্যতামূলক করার পরামর্শও দেওয়া হয় সুপারিশে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) শেখ নাজমুল আলম সারাবাংলা’কে বলেন, ‘আমরা ঢাকায় বসবাসকারী বিদেশিদের পর্যবেক্ষণ করছি। তাদের মধ্যে কেউ যদি দেশের ভেতরে কোনো অপরাধে জড়িত থাকে, তবে আমরা তাদের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেবো।’

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে ঢাকায় বসবাসকারী বিদেশিদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এমনকি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তারা দেশে অবস্থান করছে। কোনো পারমিট ছাড়াই তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবৈধভাবে কাজ করে চলেছে।

ওই সূত্রটি জানায়, বিদেশিদের যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ এবং তারা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে। তারা ফুটবলার হিসেবে দেশে এলেও প্রকৃতপক্ষে পেশাদার ফুটবলের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

ডিএমপির আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিদেশিদের কেউ কেউ নিজেদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার পরামর্শক হিসেবে দাবি করে দেশে প্রবেশ করছে। আবার তাদের অনেকেই অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে দেশে প্রবেশ করেছে।

ডিএমপির অপরাধ বিশ্লেষণ অনুযায়ী জানা যায়, অপরাধে ‍যুক্ত থাকার দায়ে এখন পর্যন্ত বিদেশিদের বিরুদ্ধে ৯৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জাল মুদ্রা ও অবৈধ মাদক ব্যবসায় মামলা হয়েছে ৪৯টি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা হয়েছে ৯টি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলের অভিযোগে দু’টি এবং আরও দু’টি মামলা হয়েছে ধর্ষণের অভিযোগে। এছাড়া আরও ১০টি মামলা হয়েছে খুন ও অন্যান্য বিভিন্ন গুরুতর অপরাধে।

বিজ্ঞাপন

ওইসব মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আফ্রিকান নাগরিকদের বিরুদ্ধে তাদের নির্দিষ্ট নাম, জাতীয়তা, বয়স ও তাদের বাসার ঠিকানা চিহ্নিত করতে তদন্তের সময় গুরুতর বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। এর প্রধান কারণ, তারা সম্পূর্ণ অজানা আফ্রিকান ভাষায় কথা বলে। আরও বড় সমস্যা হলো— বিদেশি নাগরিকদের অনেকের দেশেরই নিজস্ব দূতাবাস বাংলাদেশে নেই। তাই সব বিদেশি নাগরিকের আঙুলের ছাপ রেখে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা, অবৈধ বিদেশিদের গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করা এবং বাংলাদেশে আসার মূল কারণ নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল তাদের ভিসা দেওয়া যেতে পারে। এসব বিষয় নিশ্চিত করে অবৈধ বিদেশিদের একটি পৃথক ডাটাবেজ তৈরি করতে পারলে আর কোনো সমস্যা হবে না বলে ডিএমপি’র সুপারিশে উল্লেখ করা হয়।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

বিজ্ঞাপন

এবারের বাজুস ফেয়ার স্থগিত
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৪৬

আরো

সম্পর্কিত খবর