Thursday 16 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুমিল্লার সমেশপুর গ্রাম
সাত দশক ধরে জীবিকার প্রধান ভরসা কপির চারা

মো. রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:০৪ | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:০০

বীজতলায় কাজ করছেন কৃষক। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা: কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতির সমেশপুর গ্রাম এখন ফুলকপি-বাঁধাকপি চারার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শ্রাবণের শেষ ভাগ থেকেই এখানকার মাঠ-ঘাট ভরে ওঠে সবুজ চারায়। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে কৃষকদের ব্যস্ততা, বাজারও চারা বেচাকেনা সরগরম থাকে। সব মিলিয়ে গ্রামীণ জীবনে এক ভিন্ন আবহ তৈরি হয় এ সময়।

জানা গেছে, আশির দশকে অন্য ফসলের পাশাপাশি ফুলকপি, বাঁধাকপি কপি চারা উৎপাদন শুরু করেছিলেন স্থানীয় কৃষকেরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লাভজনক হওয়ায় চারার চাষই হয়ে ওঠে সমেশপুরের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক পরিবারের প্রধান জীবিকা। বর্তমানে দুই শতাধিক মানুষ এই মৌসুমী চাষে সরাসরি যুক্ত। চারার বিক্রয়কাল শুরু হয় ভাদ্রের মাঝামাঝি, চলে আশ্বিন পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

প্রতিটি চারা সর্বোচ্চ তিন টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বাজার ছাড়াও কুরিয়ার ও বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে দেশের নানা প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে এই চারা। ফলে শুধু গ্রাম নয়, জেলার বাইরেও “সমেশপুরের চারা” নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে এই উৎপাদন।

লাভজনক হলেও এই চাষের পথে বাধা কম নয়। শ্রমিকের বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এছাড়াও তাদের অভিযোগ, স্থানীয় পর্যায়ে ফসলি জমিতে বাসা-বাড়ি নির্মানের কারণে অনেক স্থানে পুল, কালভার্ট বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে চারা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

সমেশপুরের কৃষকরা জানান, একেকটি বীজতলার আয়তন প্রায় ১৮ ফুট লম্বা ও সাড়ে তিন ফুট চওড়া হয়। সঠিক সময়ে জমি প্রস্তুত করে তাতে বীজ বপন করা হয়। এরপর শুরু হয় পরিচর্যার দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বীজতলায় ব্যস্ত থাকতে হয় পরিবার-পরিজনকে। তবে শুধু পারিবারিক শ্রমই যথেষ্ট নয়। স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগ করতে হয় প্রতিদিন ৮০০ টাকা মজুরিতে। এর সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার খরচও বহন করতে হয় কৃষককে।

কৃষক আলম ও জালাল জানান, ‘এবার প্রায় ৫০ বিঘার বেশী জমিতে চারা উৎপাদন হয়েছে। চারা উৎপাদন ও বিপননের ব্যস্ততা আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকবে। এজন্য অনেকে মাস চুক্তি বা চারা উৎপাদনের পুরো সময়টা নির্দিষ্ট টাকায় শ্রমিক নিয়োগ করেছেন। বর্তমানে প্রতিটি চারা সর্বোচ্চ তিন টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চারা কিনতে আগ্রহীরা কৃষকের মোবাইল ফোনে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে টাকা পাঠালে কুরিয়ার বা বিভিন্ন যানবাহনে করেও চারা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’

এবার কিরন, মাউন্টেন, ফ্রেশ, সুজুকি, হোয়াইট গোল্ড, হোয়াইট মার্বেল, জোড় ফুল, সিরাজী, ৭৭, সিলভার কাপ জাতের বীজ এখানকার চাষিরা বেশি ব্যবহার করছেন বলে জানা গেছে। সমেশপুর ছাড়াও আশপাশের গ্রামগুলোতেও এবার কপি চারা বিক্রয় হচ্ছে।

গ্রামের চারা উৎপাদনকারী কৃষকরা বলেন, সাত দশকের বেশি সময় ধরে সমেশপুরে বাণিজ্যিকভাবে সবজির চারা উৎপাদিত হচ্ছে। আগস্ট থেকে ডিসেম্বর—এই পাঁচ মাসে কয়েক ধাপে শতাধিক চারা উৎপাদনকারী পরিবার ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার চারা বিক্রি করেন। প্রতিবছরই সংখ্যাটা বাড়ছে।

৫২ বছর বয়সী মীর শহিদুল্লাহকে জমি থেকে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা সংগ্রহ করতে দেখা গেল। তাকে ঘিরে আছেন চারজন। সবাই চারা নিতে এসেছেন। তাঁদের একজন কুমিল্লা সদর দক্ষিণের সুয়াগাজী এলাকার আবদুল জলিল। বললেন, ‘১৪০০ টাকা কইরা ৬ হাজার পাতাকপির (বাঁধাকপি) চারা কিনছি। এইখানকার চারা সারা দেশের সেরা। গত ১৮ বছর ধইরা এই গ্রাম থ্যাইক্কা চারা কিনতাছি।’

মীর শহিদুল্লাহ বলেন, তিনি ৩০ শতাংশ জমিতে বীজ বপন করেছেন। এখন প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করছেন। চলতি মৌসুমে ৪০ লাখ টাকার মতো বিক্রির আশা করছেন। এক হাজার চারার দাম ১ হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘আমরা ভালা বীজ দিয়া চারা বানাই। এর লাইগ্যা মাইনসে দূরদূরান্ত থাইক্যা চারার লাইগ্যা আহে। ইন্ডিয়ার লোক আইয়াও চারা নেয়। আমি ৩৪ বছর ধইরা করতাছি। এর আগে আমার বাপেও চারার ব্যবসা করছে।’

বুড়িচং উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোসা. আফরিনা আক্তার জানান, ‘বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৪৬ কৃষক পরিবার রয়েছে। কৃষি অধিদফতর থেকে তাদের কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে চাষির সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আমরা আশাবাদী। আমরা তাদের সব রকম সহযোগিতা করে আসছি। ভবিষ্যতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

বিজ্ঞাপন

পঞ্চগড়ে ৩ কলেজের কেউ পাস করেনি
১৬ অক্টোবর ২০২৫ ২২:৪৯

ঢাবির চারুকলায় শরৎ উৎসব উদযাপন
১৬ অক্টোবর ২০২৫ ২২:১৪

আরো

সম্পর্কিত খবর