ঢাকা: এখন থেকে মনোনীত ব্যাংকগুলোকে দেশের বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের (সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটসহ) তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো’ (সিআইবি) এর ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন মোতাবেক গৃহীত সকল ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণের তথ্য মনোনীত ব্যাংক কর্তৃক সিআইবি ডাটাবেজে রিপোর্ট করতে হবে। পাশাপাশি ঋণের সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের (পরিচালক, ২০ শতাংশের অধিক শেয়ারহোল্ডার, জামিনদার ইত্যাদি) তথ্যও দিতে হবে। একইসঙ্গে বিদেশি ঋণদাতার নাম, ঠিকানা, দেশের নাম এবং বাংলাদেশে ঋণ অনুমোদনকারীর তথ্য প্রতিটি ঋণের সঙ্গে সিআইবি ডাটাবেইজে রিপোর্ট করতে হবে। ঋণের তথ্য অনুমোদিত বিদেশি মুদ্রা অনুযায়ী এবং ঋণের আউটস্ট্যাডিং ও ওভারডিউয়ের পরিমাণ মার্কিন ডলার অনুযায়ীও রিপোর্ট করতে হবে। এছাড়া কোনো বিদেশি ঋণ সমন্বয় হলে বা নতুন ঋণ হলে কিংবা কোনো কারণে ঋণের মান পরিবর্তন হলে তাৎক্ষণিক সিআইবিতে হালনাগাদ করতে হবে। কোনো ভুল তথ্য দিলে জরিমানা দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের তথ্য সিআইবি-তে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সার্কুলারে বলা হয়, বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের তথ্য সিআইবি ডাটাবেজে না থাকায় ঋণগ্রহীতার প্রকৃত ঋণের তথ্য সিআইবি রিপোর্টে প্রতিফলিত হয় না এবং গৃহীত ওই বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলেও ঋণগ্রহীতার স্থানীয়ভাবে নতুন ঋণ সুবিধা পাওয়ায় সম্ভাবনা থেকে যায়। এ প্রেক্ষিতে সিআইবি ডাটাবেইজে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হলে দেশের ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও বাড়বে এবং ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে। এর মাধ্যমে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলো কোনো ঋণ অনুমোদনকালে গ্রাহকের সক্ষমতা যাচাই ও ঝুঁকি নিরূপণ আরও দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদন করতে পারবে, যা সামগ্রিকভাবে আর্থিক খাতের ঋণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করবে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারী কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার আস্থা অর্জনেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দেশের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি পঞ্জিকা বছরের গত জুন শেষে দেশের বেসরকারি খাতে পুঞ্জিভূত স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৭৭ কোটি ৮২ লাখ ২০ হাজার ডলার (জিডিপি’র দশমিক ৭ শতাংশ)। গত ২০২৩ সালের জুন শেষে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ কমেছে ৭৯ কোটি ৬৬ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্বল্পমেয়াদী ঋণের পরিমাণ-ই অধিক। গত জুন শেষে স্বল্প মেয়াদী এ ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার ডলার। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৯৭১ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
স্বল্পমেয়াদী ব্যবসা ঋণের মধ্যে বায়ার্স ক্রেডিট খাতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৫২৫ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ডলার, ডেফার্ড পেমেন্ট খাতে ৬৫ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, বিদেশি ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি’র বিপরীতে ১১৭ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট-এর মাধ্যমে ১৪১ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার ঋণ গ্রহণ এবং বিভিন্ন স্বল্প মেয়াদী দায় রয়েছে প্রায় ৮০ কোটি ৮০ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের মধ্যে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ৮৯ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার ঋণ নিয়েছে (এর মধ্যে ৮২ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার নেওয়া হয়েছে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট-এর মাধ্যমে)। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ ৮৮১ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার ডলার (এর মধ্যে ব্যবসা সংক্রান্ত ঋণ ২২ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ডলার) এবং নন-ব্যাংক ডেপজিটরি কর্পোরেশনগুলোর ঋণ স্থিতি হচ্ছে ৯১ লাখ ৩০ হাজার ডলার।