ঢাকা: ঢাক-ঢোল, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে চলছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এরইমধ্যে মহাসমারহে শেষ হয়েছে মহাসপ্তমীর আনুষ্ঠানিকতা। আজ পালিত হচ্ছে মহাঅষ্টমী। এদিনের মূল আকর্ষণ কুমারীপূজা। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে মহাষ্টমী পূজা আরম্ভ হয়েছে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে।
শারদীয় দুর্গোৎসবের অষ্টমী মানেই আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর ভক্তির আবহ। তবে, এ দিনটির মূল তাৎপর্য পূর্ণতা পায় কুমারীপূজায়। হিন্দু ধর্মীয় আচার অনুযায়ী, এক কুমারী কন্যার মধ্যে দেবী দুর্গার শক্তি, পবিত্রতা ও মাতৃত্বের প্রতীক রূপে পূজা করা হয়। এ পূজা মূলত অষ্টমী বা নবমীতে অনুষ্ঠিত হয়, তবে শারদীয় দুর্গোৎসবে অষ্টমীকে সবচেয়ে শুভক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
কুমারীপূজার দর্শন
কুমারীপূজার মূল দর্শন হলো—নারীই শক্তির উৎস। নারী কেবল সংসারের অঙ্গ নয়, তিনি সৃষ্টির মূল। দেবী দুর্গা শক্তির প্রতীক হলেও তার রূপ মূর্ত হয় সাধারণ কুমারী কন্যার ভেতরে। এই পূজার মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভক্তির প্রকাশ ঘটে। শাস্ত্র মতে, কুমারীর মধ্যে মাতৃরূপে দেবী শক্তিকে উপলব্ধি করা হয়।
পূজার আচার ও পরিবেশ
কুমারীপূজার জন্য সাধারণত ২ থেকে ১২ বছর বয়সী এক বা একাধিক কন্যাকে বেছে নেওয়া হয়। তাদের দেবীর রূপে স্নান করিয়ে শুদ্ধ পোশাকে সাজানো হয়। এরপর পূজার আসনে বসিয়ে চরণ ধৌত করে ফুল, চন্দন, সিঁদুর, ধূপ-ধুনা দিয়ে পূজা করা হয়। ভক্তরা মনে করেন, এভাবে পূজিত কুমারী আসলে দেবী দুর্গার শক্তির মূর্ত প্রতীক।
এই সময় মণ্ডপে এক অনন্য আবহ তৈরি হয়। ভক্তরা ভক্তিভরে প্রণাম করে, আশীর্বাদ নেয়, অনেকে বিশ্বাস করেন কুমারীর পায়ে প্রণাম করলে জীবনে পাপ দূর হয়, পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি আসে।
ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে কুমারী পূজা
কুমারীপূজার প্রচলন বহু প্রাচীন। বলা হয়, আদ্যাশক্তি সাধনার ধারক স্বামী বিবেকানন্দই কুমারীপূজাকে সর্বজনীন মাত্রা দেন। তিনি নারীকে দেবী রূপে পূজা করার প্রচলনকে সমাজে মর্যাদা দেন। তখন থেকেই পূজার আয়োজন বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে তাৎপর্য
আজকের দিনে কুমারীপূজা কেবল ধর্মীয় আচার নয়, বরং নারী-পুরুষ সমতার প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়। সমাজে যখন নারী এখনো বৈষম্য, সহিংসতা ও অবমূল্যায়নের শিকার, তখন কুমারীপূজা এক শক্তিশালী বার্তা দেয়— নারীকে দেবীর আসনে বসিয়ে শ্রদ্ধা করতে হবে, তাকে মানুষ হিসেবে সম্মান জানাতে হবে।
রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে এ বছর কুমারীপূজা হবে সকাল ১১টায় এবং শেষ হবে দুপুর ১টায়। এর আগে, মহাষ্টমী পূজা আরম্ভ হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে, পুষ্পাঞ্জলি হবে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে এবং মধ্যাহ্ন প্রসাদ দুপুর ১২টায়। মহাঅষ্টমী উপলক্ষে সন্ধিপূজা হবে সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে এবং সমাপন হবে সন্ধ্যা ৭টা ১ মিনিটে।