চট্টগ্রাম ব্যুরো: নৌ পরিবহণ উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে এক মাস স্থগিত রাখার পর ১৪ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে বিভিন্ন সেবাখাতে বাড়ানো ট্যারিফ (মাশুল) আদায়ের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থ ও হিসাবরক্ষণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা মো. আবদুস শাকুরের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৪ অক্টোবর রাত ১২টার পর চট্টগ্রাম বন্দরে আসা সব জাহাজ, কনটেইনার ও কার্গো বিল নতুন রেট অনুযায়ী নেওয়া হবে। একইভাবে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিসহ সকল বন্দর ব্যবহারকারী বর্ধিত হারে মাশুল পরিশোধ করবেন। তালিকাভুক্ত সব শিপিং এজেন্টকে তফসিলি ব্যাংকে তাদের হিসেব নম্বরে বর্ধিত হারে যথাযথ পরিমাণ অর্থের সংস্থান রেখে আসা জাহাজের ছাড়পত্র (এনওসি) নিতে বলা হয়েছে।
এর আগে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারি প্রজ্ঞাপন মতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৩টি খাতে বর্ধিত হারে মাশুল আদায় কার্যকর ঘোষণা করে। ফলে বিভিন্ন খাতে বন্দর ব্যবহারের ওপর খরচ বেড়ে যায় সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত। প্রায় ৪০ বছর পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের বিভিন্ন সেবাখাতে মাশুল বৃদ্ধি করলেও তীব্র আপত্তি জানান ব্যবসায়ীরা। রফতানিমুখী শিল্পে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা বলেন, শেষ পর্যন্ত এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভোক্তারা।
এর পর গত ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে এক কর্মশালায় নৌপরিবহণ উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেনের উপস্থিতিতে বন্দর ব্যবহারকারীরা এ বিষয়ে আপত্তি তুলে ধরেন। আপত্তির মুখে উপদেষ্টা বর্ধিত ট্যারিফ (মাশুল) আদায় এক মাস পেছানোর সিদ্ধান্ত জানান।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাননীয় উপদেষ্টা একমাস স্থগিতের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বর্ধিত ট্যারিফ আদায়ের পরিপত্র জারি হয়েছিল। এ হিসেবে ১৪ অক্টোবর রাত ১২টার পর অর্থাৎ ১৫ অক্টোর থেকে সেটা আদায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৫২টি খাতে মাশুল আদায় করা হয়। সেখান থেকে ২৩টি খাতে মাশুল বাড়ানো হয়। বন্দর কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, মাশুল বাড়ানোর ক্ষেত্রে বন্দরের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছে স্পেনের প্রতিষ্ঠান আইডম। এশিয়ার ১০টিসহ ১৭টি আন্তর্জাতিক বন্দরের কার্যক্রম এবং ট্যারিফ পর্যালোচনা করেই চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে।
দেশে আমদানি-রফতানিকেন্দ্রিক সমুদ্র বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ এবং কনটেইনার ও পণ্য পরিবহণের ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৭ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। ২০২৩ সালে করেছিল ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ টিইইউস। ২০২২ সালে ছিল ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউস। এছাড়া, চট্টগ্রাম বন্দর বছরে গড়ে ১৩ কোটি মেট্রিকটন কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং করে। একইসঙ্গে বছরে পণ্যবাহী ৪ হাজারের বেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং করে।
প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সবচেয়ে বেশি মাশুল বেড়েছে কনটেইনার পরিবহণ খাতে। প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা থেকে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা বেড়ে নতুন মাশুল দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা। এ হিসেবে প্রতি কনটেইনারে মাশুল বেড়েছে গড়ে ৩৭ শতাংশ।
আবার কনটেইনারবাহী জাহাজের ক্ষেত্রে আমদানি কনটেইনারের জন্য ৫ হাজার ৭২০ টাকা ও রফতানি কনটেইনারের জন্য ৩ হাজার ৪৫ টাকা মাশুল বেড়েছে। প্রতিটি কনটেইনার ওঠানামার ক্ষেত্রে মাশুল বাড়ানো হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। কনটেইনারের প্রতি কেজি পণ্যের জন্য মাশুল আগের ১ টাকা ২৮ পয়সার সঙ্গে আরও ৪৭ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। সার্বিকভাবে শুধুমাত্র ওঠানামাসহ কনটেইনার পরিবহণ খাতেই মাশুল বেড়েছে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জাহাজের ওয়েটিং চার্জ বেড়েছে ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় ১০০ শতাংশ। কোনো জাহাজ নির্ধারিত সময়ে ভিড়তে না পারলে অর্থাৎ ওয়েটিং টাইম ১২ ঘণ্টার বেশি হলে ১০০ শতাংশ, ২৪ ঘণ্টার জন্য ৩০০ শতাংশ, ৩৬ ঘণ্টার জন্য ৪০০ শতাংশ এবং ৩৬ ঘণ্টার বেশি হলে অতিরিক্ত চার্জ ৯০০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। জাহাজের পাইলটিং চার্জ ৮০০ মার্কিন ডলার এবং প্রতিবার জাহাজ টেনে আনার টাগ চার্জ ৬ হাজার ৮৩০ ডলার পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।