Sunday 05 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মিয়ানমারের ভেতরেই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান: ইউএনএইচসিআর প্রধান

সারাবাংলা ডেস্ক
১ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:০৫ | আপডেট: ১ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:০৭

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান কেবল মিয়ানমারের ভেতরেই সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। তিনি সতর্ক করে বলেন, মিয়ানমারের সাহসী পদক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গাদের দুর্দশার অবসান হবে না।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দফতরে আয়োজিত ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এ কথা বলেন।

ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘এই সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে। আর সমাধানও সেখানেই।’

ইউএনএইচসিআর প্রধান স্মরণ করিয়ে দেন, আট বছর আগে মিয়ানমারের সেনাদের নির্মম সহিংসতায় সাত লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে যায়। আর অনেকে রাখাইন রাজ্যেই বাস্তুচ্যুত অবস্থায় রয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

গ্রান্ডি বলেন, এখন আরাকান আর্মি রাখাইনের বেশিরভাগ এলাকা দখলে নিলেও রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। তাদের জীবনে প্রতিদিনের বাস্তবতা হলো গ্রেফতার ও আটক হওয়ার ভয়, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় প্রবেশাধিকার সীমিত, চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা, জোরপূর্বক শ্রম ও নিয়োগ। প্রতিদিনই তারা বর্ণবাদ ও আতঙ্কের শিকার, বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গ্রান্ডি বলেন, দেশটি বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে এবং ২০২৪ সালের নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতের পর আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করেছে।

ইউএনএইচসিআর প্রধান আরও বলেন, ‘অসংখ্য চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো রোহিঙ্গার আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা দেখিয়েছে, উদাসীনতা ও দায়িত্বহীন মনোভাব যখন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে, সে সময়েও সহানুভূতি দেখানো সম্ভব। শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে জীবন রক্ষা করে বাংলাদেশ তা প্রমাণ করেছে।’

বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার প্রশংসা করেন গ্রান্ডি। তবে বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা তহবিলের ঘাটতি এখনো রয়ে গেছে বলেও উদ্বেগ জানান।

গ্রান্ডি সতর্ক করে বলেন, যথেষ্ট তহবিল ছাড়া জরুরি সহায়তা কাটছাঁট করতে হতে পারে। ফলে শিশুদের পুষ্টিহীনতা বাড়বে এবং আরও রোহিঙ্গা বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন।

ইউএনএইচসিআর প্রধান বলেন, যদি পর্যাপ্ত তহবিল না আসে, তাহলে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমাদের কিছু কাটছাঁট করতে হবে। তবে আমরা শিশুদের অপুষ্টিজনিত মৃত্যু এবং বিপজ্জনক নৌযাত্রায় রোহিঙ্গাদের প্রাণহানির ঘটনা রোধের চেষ্টা করব।

তিনি বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে তহবিল, পুনর্বাসন, শিক্ষা ও শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। তবে গ্রান্ডি জোর দিয়ে বলেন, শুধু মানবিক সহায়তা এই সংকট সমাধান করতে পারবে না। আমরা উদাসীনতার পথে চলতে পারি না। একটি জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস হতে দিয়ে সমাধানের আশা করা যায় না।

রাখাইন উপদেষ্টা কমিশনের কমিশনের সুপারিশগুলো আগের মতোই প্রাসঙ্গিক এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে দিকনির্দেশনা হওয়া উচিত উল্লেখ করে গ্রান্ডি বলেন, কিন্তু সাহসী পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না।

প্রভাবশালী দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়ে ইউএনএইচসিআর প্রধান বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির সঙ্গে সক্রিয় সম্পৃক্ততা বাড়ানোর যাতে মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা যায়। সঙ্গে আস্থা পুনঃস্থাপন করে মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগণের জন্য ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই সমাধান গ্রহণ করা যায়।

বক্তব্যর শেষে গ্রান্ডি বলেন, ধারাবাহিক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও নতুন পন্থার মাধ্যমে জটিল সংঘাতের গতিপথ পরিবর্তন করা সম্ভব। মিয়ানমারের জনগণের জন্য ন্যায়সঙ্গত, বাস্তব ও ভবিষ্যৎমুখী নতুন অধ্যায় শুরু করতে চাই। রোহিঙ্গাদের দুর্দশার স্থায়ী সমাধানে, আমাদের সামনে এ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।

সারাবাংলা/ইআ

ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা সংকট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর